কলকাতা: তৃণমূলের অন্দরে নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব চরমে। সেই আবহে এবার জোড়াফুল (TMC) শিবিরকে কটাক্ষ করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূলের অন্দরে বিভাজনের কথা তুলে ধরলেন তিনিও। সেই সঙ্গে 'তৃণমূলের সবাই চোর' বলেও ফের মন্তব্য করলেন শুভেন্দু। বুধবারও তৃণমূলের একের পর এক নেতা যখন প্রকাশ্যে বাগযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছেন, সেই সময়ই সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন লিখলেন বিরোধী দলনেতা। (Suvendu Adhikari)


বুধবার ফের দলের সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন বরাহনগরের তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়। সেই নিয়ে কাটাছেঁড়ার মধ্যেই X হ্যান্ডলে (সাবেক ট্যুইটার) কটাক্ষমিশ্রিত পোস্ট দেন শুভেন্দু। তাতে লেখেন, 'তোলামূলের দুই ভাগ, তবে একটি বিষয় পরিষ্কার, তোলামূলের আপাদমস্তক সবাই চোর!!!' লেখার সঙ্গে একটি ছবিও পোস্ট করেছেন শুভেন্দু, তাতে একদিকে দুর্নীতিকাণ্ডে নাম জড়ানো কুন্তল ঘোষ, অয়নশীলদের ছবি রয়েছে, অন্য দিকে ছবি রয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডল, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকদের। (Suvendu on TMC)


আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে তৃণমূলের অন্দরে বিভাজন নিয়ে জোর জল্পনা চলছে, যাতে ইন্ধন জুগিয়ে চলেছেন দলের নেতারাই। প্রকাশ্যেই পরস্পরের বিরুদ্ধে মুখ খুলে চলেছেন তাঁরা। পরস্পরকে কড়া ভাষায় আক্রমণও করছেন। শুধু তাই নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে নিজ নিজ অবস্থানও স্পষ্ট জানাতে নেমে পড়েছেন তাঁরা। 



আরও পড়ুন: Tapas Roy: ‘ও সাদা হাতি, অনুৎপাদক’, সুদীপকে বেনজির আক্রমণ তাপসের


রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহও এই দলে শামিল হয়েছেন। মমতার পর তৃণমূলে অভিষেকের ধারেকাছে কেউ নেই বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, "মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের পর তৃণমূলে অভিষেকের ধারেকাছে কেউ নেই। নতুন প্রজন্মকে মানতেই হবে। আর যাঁরা নতুন প্রজন্মকে তৈরি করতে পারে না, তাঁদের থেকে ব্যর্থ কেউ নেই।" উদয়নের মতো দলের অন্দরে বিভাজনের তত্ত্ব উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে দেখা যাচ্ছে অনেককেই। 


কিন্তু এতেও বিতর্ক থামছে না। কারণ বুধবার সকালে নতুন করে জল্পনায় ইন্ধন জুগিয়েছেন তাপস। ফের চাঁচাছোলা ভাষায় সুদীপকে আক্রমণ করেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য তৃণমূল করি। কিন্তু যদি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে তুষ্ট করে যদি চলতে হয়, তাহলে নিশ্চয়ই ভাবতে হবে আমাকে। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে আমি দল করি নাকি? আমাদের দলে তো ছয়-সাত বছর ছিল না ও! বলেছিল, দলটা নাকি উঠে যাবে! ওরা স্বামী-স্ত্রী মিলে কী কী করেছিল, আমার কাছে আছে। প্রয়োজনে আবারও তুলব। যারা দলের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে চাইছে, শীঘ্রই চিহ্নিত করা হবে। যারা মমতাপন্থী, যারা তৃণমূলপন্থী, যারা অভিষেকপন্থী, সুদীপ তাদের পছন্দ করে না।"


দলের নেতাদের বাদ দিয়ে, তাঁকে বাদ দিয়ে, উত্তর কলকাতায় সুদীপ নিজের মতো কিছু একটা করতে চাইছেন বলেও এদিন দাবি করেন তাপস। তাঁর বক্তব্য, "নিজের মতো করে উত্তর কলকাতার সাতটি ওয়ার্ডে নিজের মতো করে কিছু করতে চাইছে ও। আমাকে ডাকবে না বলে, কাউন্সিলর এবং ওয়ার্ড সভাপতিদের নিষেধ করে দেয়। ওর থেকে বেশিদিন তৃণমূল করছি। হিসেবে মাঝের ছ'-সাত বছর বাদ দেওয়া হোক, যে সময় ও ছিল না দলে। ১৫ বছর ধরে আমার উপর যে অত্যাচার, অন্যায়, অবিচার হয়েছে, যে অসভ্যতা, অসম্মানের শিকার হয়েছি, তার বিচার হোক।" প্রকাশ্যে এই বাগযুদ্ধের জেরেই তৃণমূলে নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে জোর চর্চা চলছে রাজ্য রাজনীতিতে।