আশাবুল হোসেন, শিবাশিস মৌলিক ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্য়ায়, কলকাতা : ফের বিস্ফোরক তথাগত রায় (Tathagata Roy)। ২০২১-এ পশ্চিমবঙ্গের ভুলের পুনরাবৃত্তি ২০২৩-এ কর্ণাটকে (Karnataka) হয়েছে। টিকিট দেওয়ার ক্ষেত্রেও একই ধরনের পক্ষপাতিত্ব হয়েছে। কর্ণাটকের সঙ্গে বাংলার প্রসঙ্গ টেনে ফের সরব তথাগত রায়। প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির বক্তব্যে স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তিতে পড়েছে গেরুয়া শিবির। কটাক্ষ করতে দেরি করেনি তৃণমূল। 


তথাগত রায় রবিবার বলেছিলেন, যারা এসেছিল তারা অপদার্থ, মূর্খ। কিছুই জানতো না। কিছু জানার চেষ্টাও করত না। ২০২৪-এ রাজ্যে যথাযথ নির্বাচন পরিচালনার লোক রাখতে হবে। নির্বাচনের কাজের বাইরে রাখতে হবে এইসব চোর, বদমাইশ, নারী মাংস লোলুপদের।

কর্ণাটকে কংগ্রেসের হাতে বিজেপির বিপর্যয়ের পর, ফের সরব রাজ্য় বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথাগত রায় ! ফের টেনে আনলেন এ রাজ্য়ে বিগত নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবির প্রসঙ্গ ! ভাষায় সেই তীক্ষ্মতা, সেই কটাক্ষ, সেই বিদ্রূপ ! আর সোমবার ঝাঁঝ আরও বাড়িয়ে ট্যুইটারে তথাগত লিখলেন,  
২০২১-এ পশ্চিমবঙ্গের ভুলের পুনরাবৃত্তি ২০২৩-এ সেখানে হয়েছে। টিকিট দেওয়ার ক্ষেত্রেও একই ধরনের পক্ষপাতিত্ব, অন্যান্য বিষয়েও ! পশ্চিমবঙ্গে ফিরে যান।


কর্ণাটকে বিজেপির সবচেয়ে বড় নেতা ছিলেন বিএস ইয়েদুরাপ্পা। কিন্তু, তাঁকে মাঝপথেই মুখ্য়মন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে অপেক্ষাকৃত কম হেভিওয়েট বাসবরাজ বোম্মাইকে মুখ্য়মন্ত্রী করে দেন মোদি-অমিত শাহরা। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, সাংগঠনিকস্তরে বিজেপির সবচেয়ে দাপুটে নেতা বিএল সন্তোষ, যিনি কর্ণাটকের নেতা হলেও, এখন মূলত দিল্লি থেকেই সংগঠন পরিচালনা করে থাকেন, তাঁর সঙ্গে বৈরিতার কারণেই ইয়েদুরাপ্পাকে কোণঠাসা করে দেওয়া হয়। আর ইয়েদুরাপ্পা কমজোর হতেই তাঁর হাতে থাকা লিঙ্গায়েত ভোটের একাংশও কংগ্রেসের দিকে চলে যায়। এই পরিস্থিতিতেই কর্ণাটকের সঙ্গে বাংলার প্রসঙ্গ টেনে সরব তথাগত রায়। সোমবার তথাগত রায় ট্যুইটারে লিখেছেন, পশ্চিমবঙ্গে ফিরে যান। সেখানেও, পুরোনো মতাদর্শভিত্তিক কর্মকর্তাদের চেয়ে তৃণমূল ও সিপিআই(এম) থেকে আসা বিদ্রোহীদের পছন্দ করার ক্ষেত্রে... সর্বত্র সাংগঠনিক উন্মাদনা ছিল। 


অর্থাৎ ভোটের আগে যাঁরা অন্য়দল থেকে বিজেপিতে দলে দলে যোগ দিয়েছিল, তাদের প্রসঙ্গই তুলে ধরেন তিনি। বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি লিখেছেন, মুকুল রায় (কেউ জানে না তিনি এখন কোন দলের সদস্য) তাঁকে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি করা হয়েছিল। তাঁকে সবসময় শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে চিপকে থাকতে দেখা যেত। আরেক দলত্যাগী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে, বিজেপির জাতীয় কার্যনির্বাহী সদস্য করা হয়েছিল। তিনি কয়েকদিনের মধ্যে দল ছেড়ে টিএমসিতে ফিরে যান। 


প্রসঙ্গত, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন মুকুল রায়। কৈলাশ বিজয়বর্গীয় তাঁকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন। ২০২১-এর ৩০ জানুয়ারি অমিত শাহের কাছে গিয়ে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্য়ায়।


দলীয় নেতৃত্বের একাংশকে উদ্দেশে তথাগতর খোঁচা, এই উন্মাদনার লেখক কারা ছিল অনুমান করার জন্য কোন পুরস্কার নেই। সেই সব ভুল শোধরাতে হবে।


বঙ্গ বিজেপিকে সতর্কবার্তা তথাগতর। প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি বলেন, কর্ণাটকে যে হারটা হল তা থেকে শিক্ষা নিতে হবে রাজ্যে। ২০২৪ এর জন্য। পশ্চিমবঙ্গে ২০২১ এ বিজেপি যে ভুল পদক্ষেপ করেছিল, সেগুলো শুধরোতে হবে। এ রাজ্যে মমতার মত শক্তিশালী নেতা, সেখানে প্রতিপক্ষ মুখ্যমন্ত্রী মুখকে সামনে আনা উচিত ছিল। বিজেপির কে মুখ্যমন্ত্রী হবে এ সম্পর্কে ধোঁয়াশা রাখা উচিত হয়নি। ২০২১ এ কিছু দুর্নীতিবাজ, নারী মাংস লোলুপদ ছিল। প্রার্থী চয়নে তাদের কুপ্রভাব পড়েছিল। প্রার্থীরা হেরেছে এবং অন্য দলে চলে গেছে।

প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির নিশানায় অস্বস্তিতে বঙ্গ বিজেপি ? বিজেপি নেতা রাহুল সিন্হা বলেন, আমরা জানি সরাতে সদা তৎপর হয়ে এই রাজ্য তৃণমূল মুক্ত করতে কাজ করছে। আমাদের বিশ্বাস, আমরা ৩৫টার বেশি আসন লোকসভা নির্বাচনে পাব এবং ২৬ আমরা ক্ষমতায় আসব। ২৬ তৃণমূল মুক্ত বাংলা গড়ব, এই আশা নিয়ে বিজেপি কর্মীরা কাজ করছে।

২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে, ২০০ পার করার টার্গেট নিলেও, ৭৭-এই থেমে যেতে হয়েছিল বিজেপিকে। এর জন্য কখনও প্রত্যক্ষভাবে, তো কখনও পরোক্ষভাবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে নিশানা করেছিলেন তথাগত রায়। ইংরাজি অক্ষর K-S-A ও D-র উল্লেখ করে আক্রমণ শানিয়েছিলেন। যা দেখে অনেকেই মনে করেছিলেন, প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির নিশানায় আসলে ছিলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়, অরবিন্দ মেননরা। প্রশ্ন হল, এবার কারা ?