অর্ণব মুখোপাধ্যায়, কলকাতা : "তাঁরা ভরসা জোগাচ্ছেন, তোদের কোনও চিন্তা নেই, আমরা আছি। তাঁদের মধ্যমণি হয়ে আছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।" ফের বিস্ফোরক কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি ও বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। অযোগ্যরা নতুন করে আবেদনের সাহস কোথায় পাচ্ছেন, এই সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে উপরের মন্তব্য করেন তিনি। এদিন এবিপি আনন্দর প্রতিনিধি অর্ণব মুখোপাধ্যায়কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে নিয়োগে বেলাগাম দুর্নীতি নিয়ে নিজের মতামত জানালেন প্রাক্তন বিচারপতি।

Continues below advertisement

এবিপি আনন্দর প্রতিনিধি : আপনার কি এখনও মনে হয়, যে যাঁরা আবেদন করেছেন তাঁদের মধ্যে কেউ অযোগ্য থাকতে পারে ?

অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় : হ্যাঁ, হ্যাঁ। আমার মনে হয়, বহু আবেদন করেছেন তো। তাঁদের মধ্যে কিছু অযোগ্য এখনও থেকে যেতে পারেন। যাঁদের নাম এই তালিকায় আসেনি।  

Continues below advertisement

এবিপি আনন্দর প্রতিনিধি : অযোগ্যরা এই সাহসটা পাচ্ছে কী করে ? সুপ্রিম কোর্ট বলছে, তারপরেও তারা আবেদন করছে। একটা তো কোথাও সাহস বা কোনও একটা ভরসা জায়গা থাকে, কোথা থেকে আসছে ? 

অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় : ভরসা এই যে রাজনৈতিক নেতাদের টাকা দিয়ে তাঁরা চাকরিগুলো পেয়েছিলেন, তাঁরা ভরসা জোগাচ্ছেন, তোদের কোনও চিন্তা নেই, আমরা আছি। তাঁদের মধ্যমণি হয়ে আছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুতরাং তাঁরা তো একটা সাহস এদের জোগাবেই। টাকাটা নিয়ে নিয়েছেন না।  

এবিপি আনন্দর প্রতিনিধি : শাসকদল এবং রাজ্য সরকার, বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে রাজ্য সরকার দ্বারস্থ হচ্ছে, অযোগ্যদের বাঁচানোর এত দায় এদের কেন রয়েছে ? রাজ্য সরকারের কেন রয়েছে ?

অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় : কারণ, রাজ্য সরকার তো তৃণমূলের। আর তৃণমূলের নেতারাই টাকা-পয়সা নিয়েছেন। যদি এদের বাঁচাতে হয়, তাহলে পার্টি অফিস থেকে তো তৃণমূল বাঁচাবে না, বাঁচাতে গেলে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে দিয়ে বাঁচাতে হবে। সুতরাং স্কুল সার্ভিস কমিশন বা রাজ্য সরকারের উপর নির্ভরতা বাড়ছে। ধরে নিন, স্কুল সার্ভিস কমিশন ১০ হাজার লোককে সুপারিশ করেছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সেখানে নিয়োগপত্র দিয়েছিল তার চেয়ে অনেক বেশি লোককে। এটা কী করে হয়েছিল ? যাদের দিয়েছিল তারা  কারা ? তাদের নামগুলো কী ? 

এবিপি আনন্দর প্রতিনিধি : কীভাবে সম্ভব ? 

অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় : এটাই তো কেলেঙ্কারি। সেইজন্যই তো কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়রা গ্রেফতার হয়ে বসেছিলেন। তাঁরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অফিসের দরজা বন্ধ করে এই কাজটাই করতেন। 

এবিপি আনন্দর প্রতিনিধি : নতুন যে পরীক্ষা হবে, আপনার মনে হয় সেটা ঠিকঠাক হবে, আর কোনও কালির ছিটা লাগবে না ?

অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় : কোনও বিশ্বাস নেই। স্কুল সার্ভিস কমিশনের উপর সব আস্থা আমি হারিয়েছি। আমার মনে হয় না, ওরা আর সুন্দরভাবে কিছু করতে পারবে। এদের চেয়ারম্যান সম্বন্ধে কিছু বলব না। কিন্তু, এদের উপরে রাজ্য সরকার তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচণ্ড চাপ থাকে এবং নিয়ন্ত্রণ থাকে, তাতে এঁদের পক্ষে একটা স্বশাসিত বডি হিসাবে কাজ করা সম্ভব নয়।  

এবিপি আনন্দর প্রতিনিধি : আজ কিছু যোগ্য চাকরিপ্রার্থী বিধানসভায় গিয়েছিলেন, শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দেখা করেছেন এবং শুভেন্দু অধিকারী তাঁদের বলেছেন, তাঁদের চাকরি ফেরানোর জন্য যদি বিধানসভায় কোনও প্রস্তাব আনা হয়, বিরোধীরাও সেটা সমর্থন করবে। এই প্রক্রিয়া কী...রাজনৈতিক দিক একটা থাকে, আইনগত দিক একটা থাকে, সম্ভব ?

অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় : আইনগত দিকে সম্ভব নয়।  যে ক্যান্ডিডেটরা গিয়েছিলেন খুব আশা নিয়ে, তাঁদের নিরাশ করতেই হচ্ছে। রাজনৈতিক আন্দোলন তো সবসময় চলতেই পারে। যাঁরা সৎভাবে চাকরিটা পেয়েছেন, তাঁদের চাকরিটা কেন যাবে ? বিশেষ করে সুপ্রিম কোর্ট যেহেতু ইন্ডিকেট করে দিয়েছে যে, পুরো পরীক্ষা ব্যবস্থাটাতেই এমন একটা দুর্নীতি ছিল, এমন সব অনিয়ম ছিল যে এই পরীক্ষা ব্যবস্থাটাকেই আর টিকিয়ে রাখা যায় না। সেইজন্যই সকলের চাকরি গেছে। তাই সকলকে আবার পরীক্ষায় বসতে হবে। 

প্রসঙ্গত, দাগিদের তালিকা প্রকাশ করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন (School Service Commission)। ১৮০৪ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।