সুদীপ্ত আচার্য ও সত্যজিৎ বৈদ্য, কলকাতা :  সাত এবং আটের দশকে, খেলোয়াড়দের দলবদল আটকাতে, তাঁদের হোটেলে নিয়ে গিয়ে রাখত ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান। এখন রাজনীতিতেও দেখা যাচ্ছে তারই ছোঁয়া। সোমবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন উপলক্ষ্যেও, পশ্চিমবঙ্গের দলীয় বিধায়কদের হোটেলে নিয়ে গিয়ে রাখল বিজেপি।


অনেকে রসিকতা করে বলছেন, সাত কিংবা আটের দশকে ময়দানের ফুটবলারদের দলবদলের সময়, ফুটবলারদের যেভাবে আগেভাগে হোটেলে নিয়ে গিয়ে, রাখা হত, এখন বঙ্গ রাজনীতিতে তা দেখা যাচ্ছে।


১৯৭৪ সালে  সুরজিৎ সেনগুপ্তর মোহনবাগান ছেড়ে সুরজিতের ইস্টবেঙ্গলে খেলা প্রায় পাকা ছিল। সেই পরিস্থিতিতে শৈলেন মান্না তাঁকে বলেন, ‘‘খেলতে যেতে হবে না। আমাদের হয়ে সইটা করে নে।’’ 

সুরজিত সেনগুপ্তর মালপত্র নামিয়ে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ডায়মন্ড হারবারের হোটেলে। গৃহবন্দি এবং প্রতিবাদী সুরজিত অনশন শুরু করে দেন। ওদিকে, লাল-হলুদ কর্তাদের পরামর্শে থানায় ডায়েরি করেন সুরজিত সেনগুপ্তর বাবা।  শেষ পর্যন্ত মোহনবাগান সুরজিৎকে ছেড়ে দেয়। 

১৯৭৯ সালে , সেই সুরজিৎ সেনগুপ্তই ইস্টবেঙ্গলের অধিনায়ক হয়ে, গোটা টিমকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রেখেছিলেন। যাতে বিপক্ষ দল কোনও ফুটবলারকে তুলে নিতে না পারে। সুরজিৎ সেনগুপ্তর বাড়ি থেকেই, সকলে মিলে সই করতে গিয়েছিলেন IFA দফতরে। সাতের দশকের এই রোমাঞ্চকর অধ্যায়ের সাক্ষী মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের ফুটবল-কর্তারা। 

আরও পড়ুন :


২১ জুলাই তৃণমূলের সমাবেশ২১ জুলাই তৃণমূলের সমাবেশের প্রচারের জন্য রাস্তায় নামল সুসজ্জিত ট্রাম" >ের প্রচারের জন্য রাস্তায় নামল সুসজ্জিত ট্রাম


প্রাক্তন ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্যরও এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে একাধিকবার। তিনি এবিপি আনন্দকে জানান, দলবদলের সময় তুলে গিয়ে হোটেলে রাখা হত। '' আটের দশকে মোহনবাগানে খেলতাম। ইস্টবেঙ্গল যোগাযোগ করে বড় অফার দেয়। সেই সময়  রয়েড স্ট্রিটের মেস থেকে তুলে নিয়ে হোটেলে রাখা শুরু হয়। ইস্টবেঙ্গল যোগাযোগ করছিল বলে ধর্মতলার হোটেলে রাখা হয়। অন্যদেরও হোটেলে রাখা হয়। বাইরে বেরনো যেত না। নিচে গুন্ডারা পাহারা দিত।'' 


সাতের দশকে ইস্টবেঙ্গলের রিক্রুটিংয়ের দায়িত্বে ছিলেন জীবন চক্রবর্তী-পল্টু দাস। যাদের লোকে চিনত জিপ নামে। তখন প্রিন্স হোটেলের লনে বসে তাঁরা ইস্টবেঙ্গলের খেলোয়াড়দের চোখে চোখে রাখেন। শোনা যায়,  জীবন চক্রবর্তী-পল্টু দাসের নজর ছিল শ্যাম থাপার দিকে। কারণ, ১৯৭৬ সালে শ্যাম থাপা মোহনবাগানের এক নম্বর টার্গেট ছিল। ফাইনালের রাতে বাংলা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর প্রিন্স হোটেলে সবাই উৎসবে মগ্ন। তখনই ঘরের পিছনে ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে শ্যাম থাপা পগার পার হয়ে যান।


দলবদলের আশঙ্কায় হোটেলে দিনযাপনের এমন সব গল্প এতদিন দুই গোলপোস্টের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল। ময়দানের সেই রাজনীতির ছোঁয়া এবার লাগল বঙ্গ রাজনীতির ময়দানে।