হিন্দোল দে ও সন্দীপ সরকার: নারকেলডাঙা-কাণ্ডের প্রতিবাদে আগামিকাল থানা ঘেরাও-র ডাক দিল বিজেপি। বেলা ১২টা নাগাদ নারকেলডাঙা থানা ঘেরাও করা হতে পারে। এদিন আক্রান্তের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে কলকাতা মেডিক্য়াল কলেজে পৌঁছে যান বিজেপি মহিলা মোর্চার সভানেত্রী তনুজা চক্রবর্তী। আসেন ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষও। গোটা ঘটনায় কড়া প্রতিবাদ শোনা গিয়েছে তাঁদের মুখে।
কী বলল বিজেপি?
তনুজা চক্রবর্তীর কথায়, 'একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলার উপর যে ভাবে অত্যাচার করা হয়েছে...আমরা শুধু ওই মহিলার জন্যই এসেছি।' পরে সজল ঘোষের সংযোজন, 'তৃণমূলে পার্থ অর্পিতাকে চিনতে পারছেন না। কেষ্ট মেয়েকে চিনবেন না। পরেশ পাল অভিজিৎ সরকারকে চেনে না। একে কোথা থেকে চিনবে? এঁকে কোথা থেকে চিনবে? কিন্তু বিচার হবেই। এই যে মা-বোনের উপর হামলা, এর প্রত্যেকটা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। যদি এই বাচ্চাটা নষ্ট হয়, মাথায় রাখতে হবে ওঁদের ঘাড়েও শনি নাচবে।' পাল্টা জবাব এসেছে তৃণমূল শিবির থেকে। শাসক দলের সাংসদ শান্তনু সেনের বক্তব্য, 'ভারতীয় জনতা পার্টি রাজনীতিতে পেরে না উঠে, মানুষের দ্বারা সব নির্বাচনে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা করছে। একটা ঘটনা ঘটেছে। মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি, এটা উত্তরপ্রদেশ নয়। পুলিশের এনকাউন্টারের নামে দুষ্কৃতীদের গুলি করে খুন করে দেওয়া হয় না এখানে। প্রশাসন কোনও কিছু খবর পেলে তার নিরপেক্ষ তদন্ত করে। বিজেপিকে বলব ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা না করে নিজেদের সংগঠন মজবুত করার চেষ্টা করুন যাতে বিরোধী হিসেবে অন্তত টিকে থাকতে পারেন।'
কী ঘটেছিল?
নারকেলডাঙার বাসিন্দা শিবশঙ্কর দাস ও তাঁর ছেলে দীপক দাসের অভিযোগ, প্রোমোটিং সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য তাঁদের দেখা করতে ডেকেছিলেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর স্বপন সমাদ্দার ও বিধায়ক পরেশ পাল। সে জন্য তাঁদের 'ছেলেরা' এসে 'তলব' করে যায়, দাবি শিবশঙ্করের। কিন্তু বাবা বা ছেলে কেউই যেতে রাজি হননি। এর পরই তাণ্ডব। অভিযোগ, জনা দুশো ছেলে এসে আচমকাই তাঁদের বাড়িতে চড়াও হয়। বেধড়ক মারধর করা হয় দীপককে। কোনও মতে প্রাণ বাঁচিয়ে তিনি নারকেলডাঙা থানায় যান। কিন্তু সেখানে আরও সমস্যা অপেক্ষা করে ছিল বলে দাবি শিবশঙ্কর-দীপকের। তাঁদের বক্তব্য, থানায় অভিযোগ তো নেওয়া হয়নি। উল্টে তাঁদের দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। আজ শিয়ালদহ আদালত থেকে জামিন পেয়ে বাড়ি ফিরলে দেখেন তাণ্ডব হয়ে গিয়েছে। দীপকের দাবি, তাঁর ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর পেটে লাথি মেরেছে হামলাকারীরা যার জেরে তাঁর অবস্থা এখন আশঙ্কাজনক। মারধর করা হয়েছে বাড়ির শিশুদেরও। দীপকের মা ও আক্রান্তের শাশুড়ির এখনও 'শক' সামলে উঠতে পারেননি। বলছেন, টাকাপয়সাও লুঠ করা হয়েছে। সব কিছু ভাঙচুর করে দিয়েছে হামলাকারীরা। গোটা ঘটনায় অভিযোগের দিকে তৃণমূল বিধায়ক ও কাউন্সিলরের দিকে। সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন অভিযুক্ত বিধায়ক ও কাউন্সিলর। এদিকে অভিযোগকারী পরিবারের বক্তব্য, তারা প্রোমোটিংয়ে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু যে প্রোমোটারকে তাঁরা নির্মাণের দায়িত্ব দেন, তিনি দেড় বছর ধরে পলাতক। তাঁর জায়গায় প্রোমোটিংয়ের দায়িত্ব নিয়েছে পরেশ পাল ও স্বপন সমাদ্দারের লোক, দাবি শিবশঙ্করদের। কিন্তু তাঁদের কোনও বৈধ নথি নেই। সেই জন্যই বাধা দিয়েছিলেন তাঁরা। তাতেই বিপত্তি, দাবি আক্রান্তদের। সব মিলিয়ে তুমুল হইচই। ফের উঠে এসেছে অভিজিৎ সরকারের হত্যার কথাও।
আরও পড়ুন:শুভেন্দু-গড় নন্দীগ্রামে সমবায় ভোটে খাতাই খুলতে পারল না বিজেপি