কলকাতা: প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের রাজনৈতিক মত, তাঁর আমলে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বহু মত রয়েছে অনেকের। কেউ সমর্থন করেছেন, কেউ বিরোধিতা করেছেন। কিন্তু ব্যক্তি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বিষয়ে তাবড় বিরোধীদের মুখেও সবসময় শোনা গিয়েছিল সুখ্যাতি। তাঁর মৃত্যুর পরেও দেখা গেল একই ছবি। তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীতে থাকা ব্যক্তিদেরও শেষ দেখার জন্য ভিড় করেন। বিধানসভায় তাঁকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের সময় মুছে যেতে দেখা গেল রাজনৈতিক রঙের বিভাজন। গতকালই তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন শিল্পী শুভাপ্রসন্ন।


'আমাকে ভালবাসতেন উনি। একটা স্পর্শ অনুভব করতাম। এসব সৎ লোকেরা তো থাকছেন না...সত্যি সৎ। যে দর্শনই বিশ্বাস করুন না কেন, সততার তুলনা হয় না। সেটা চিরকাল মনে রেখে দেব', প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মৃতিচারণার সময় কথা বলতে বলতে ফুঁপিয়ে কাঁদলেন শুভাপ্রসন্ন। 


সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, নেতাই। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শাসনকালের শেষদিকে বারবার নানা বিতর্কে জড়িয়েছে বামফ্রন্ট সরকার। সেই সময় বাম শাসনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলেন বিপুল সংখ্য়ক মানুষ-অবাম সমর্থক। নাগরিক  মিছিলে, গ্রামে-শহরে বারবার দেখা গিয়েছিল একঝাঁক বুদ্ধিজীবী, বিদ্বজনদের- যাঁদের সেই সময় নাম দেওয়ার হয়েছিল পরিবর্তনপন্থী বলে। তাঁদের অনেকেই এখন বর্তমান শাসক দলের নেতা-বিধায়ক, কেউ অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। প্রতিবছরই দেখা যায় ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে। সেই পরিবর্তনপন্থী বুদ্ধিজীবীদের অন্যতম শিল্পী শুভাপ্রসন্ন। 


একসময় শুভাপ্রসন্ন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলেই নানা মহলের মত। তারপরে ধীরে ধীরে তৃণমূলের, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্পর্শে আসেন তিনি। পরে রেলের কমিটিতে স্থান পান। হেরিটেজ কমিটির প্রধানও হয়েছিলেন। গতবছর, ভাষা দিবসের সময়ে বাংলাভাষায় বিশেষ ২টি শব্দ ঢোকানো বা ব্যবহার নিয়ে কিছু মত প্রকাশ করেছিলেন শুভাপ্রসন্ন। সেই সংক্রান্ত বিষয়ে তৃণমূলের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল তাঁর।


আজই শেষকৃত্য:
তারার দেশে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কাস্তে-হাতুড়ি-তারার পতাকা গায়ে জড়িয়ে শেষ যাত্রায় তিনবারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। প্রিয় নেতাকে শেষবারের মতো দেখার আকুতি তাঁর অসংখ্য অনুরাগী ও গুণমুগ্ধদের। এদিন সকাল থেকেই তপসিয়ার পিস ওয়ার্ল্ডের সামনে জড়ো হন অনেকে। কারও হাতে ফুল, কারও হাতে ছবি। আগেভাগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য ও সন্তান সুচেতন। ছিলেন মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী, রবীন দেবরা। সকাল ১০.৩৫ মিনিটে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর দেহ পিস ওয়ার্ল্ড থেকে বের করে শববাহী গাড়িতে তোলা হয়। বেঙ্গালুরু থেকে আনানো লাল জারবেরা ফুল আর রক্ত পতাকা দিয়ে সাজানো হয়েছিল শববাহী গাড়ি। তারপর বিধানসভা, মুজফফর আহমেদ ভবন, দীনেশ মজুমদার ভবন ঘুরে পৌঁছয় এনআরএস হাসপাতাল।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।


আরও পড়ুন: ভারতে ঢুকতে চেয়ে ভিড়! শীতলখুচি সীমান্তে জলে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার বাংলাদেশি