কলকাতা: শাসন ক্ষমতা বহু আগেই চলে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে প্রধান বিরোধী দলের জায়গাও হারিয়েছে সিপিএম। বরং সিপিএম-কংগ্রেসকে ছাপিয়ে, রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে নিজের জায়গা মজবুত করে ফেলেছে বিজেপি। এমনটা যে হতে পারে, একদশক আগেই তা আঁচ করতে পেরেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে জায়গা করে দেওয়ার জন্য বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দুষেছিলেন তিনি। (Buddhadeb Bhattacharjee:)


২০১৩ সালে এবিপি আনন্দকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে এ রাজ্যে বিজেপি-র পুনরুত্থান নিয়ে মুখ খুলেছিলেন বুদ্ধদেব। মমতা সরকার যে সমস্ত কাজকর্ম করছে, তার জন্যই রাজ্যে বিজেপি মাথা তোলার জায়গা পেয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেছিলেন তিনি। ওই সাক্ষাৎকারে ঠিক যা বলেছিলেন বুদ্ধদেব—


প্রশ্ন: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজই বলেছেন, সাচার কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সংখ্যালঘুদের জন্য ৯৯ শতাঁশ কাজ হয়ে গিয়েছে। কী বলবেন?


বুদ্ধদেব: সংখ্যালঘুরা কী অবস্থায় রয়েছেন, তার রিপোর্ট হল সাচার কমিটির রিপোর্ট। রঙ্গনাথ কমিশনের সুপারিশগুলি রয়েছে তাতে।


প্রশ্ন: কিন্তু উনি তো বলছেন বৃহত্তর মুসলিমদের সংরক্ষণের আওতায় ঢোকানো হয়েছে?


বুদ্ধদেব: মুসলিমরাই তো বাদ চলে গিয়েছে! অর্ডারটা তো দাঁড়ায়নি। আমি যা করে এসেছিলাম, উনি আরও বাড়িয়ে দেবেন বলেছিলেন। শেষ পর্যন্ত কী হল?কিছুই তো হয়নি? বলছেন ১০ হাজার মাদ্রাসা। আমাদের এ রাজ্য়ে ১০ হাজার মাদ্রাসা কোথায়? এর পর হল ইমাম ভাতা। ভেবে দেখুন, চিরকাল মন্দির, মসজিদ, গির্জা চলেছে ধর্মপ্রাণ মানুষের দানে। হঠাৎ সরকার এই দায়িত্ব নিতে গেল কেন? নিতে গিয়েছে বলেই তো আজ বিজেপি মাথা তুলছে! 


এসব কাজ করতে গিয়ে রাজ্যে বিজেপি-কে আবার খানিকটা জমি ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। বিজেপি তো বলতে শুরু করেছে, ইমামদের ভাতা দিলে পুরোহিতদের কেন দেওয়া হবে না! অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে আবার মন্দির-মসজিদ অ্যাজেন্ডা হয়ে যাচ্ছে। বিজেপি-কে পথ ছাড়া এই সরকারের অবদান। বিজেপি-কে এই সুযোগ করে দেওয়া একেবারেই উচিত হচ্ছে না।


এই কথাগুলি আসলে খুব খারাপ। সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন আসলে কী? মুসলমান ছেলেমেয়েদের আসল সমস্যা কী? শিক্ষা এবং কাজ। তার জন্য অন্যদের মতো সমান জমি চাই। আমি আর কিছু করতে না পারি, রাইটার্স বিল্ডিংয়ে ১০০টা লোক ঢুকলে, তার মধ্যে ১০মজন মুসলমান ছেলে হবে, এটা করে এসেছিলাম। সেটা বন্ধ হয়ে গেল কেন? এই করছি, সেই করছি বলে কিছুই হচ্ছে না। (Buddhadeb Bhattacharjee Demise)