পার্থপ্রতিম ঘোষ, বিজেন্দ্র সিংহ ও কৃষ্ণেন্টু অধিকারী, কলকাতা: ঠিক কী কারণে খুন হলেন, কয়লা মাফিয়া রাজু ঝা? ব্য়বসায়িক রেষারেষি, নাকি এর নেপথ্য়ে রয়েছে অন্য কোনও রহস্য? এখনও পর্যন্ত সেই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। প্রশ্ন এটাও যে, রাজুকে খুন করলে কার লাভ? খুনের পরে গরু পাচারকাণ্ডে অভিযুক্ত আব্দুল লতিফই বা কোথায় গেলেন?
কয়লা মাফিয়া রাজু ঝা খুনের সঠিক কারণ এখনও অজানা। আর সেইসঙ্গে প্রশ্ন গরু ব্য়বসায়ী আবদুল লতিফ অন্তর্ধানের মধ্যেই কি লুকিয়ে আছে রাজু-হত্যার রহস্যের উত্তর?
তার কারণ, রাজু ঝার খুনের ঘটনার আগে, দেড় ঘণ্টা ধরে তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন লতিফ...! শ্যুটআউটের সময় একই গাড়িতে ছিলেন দুজনে।
শ্য়ুটআউটে রাজু শেষ, লতিফ উধাও! আর এখানেই নানা মহলে প্রশ্ন উঠছে লতিফ আর রাজু ঝা একসঙ্গে কোথায় যাচ্ছিলেন? তারা কি কলকাতায় বিশেষ কোনও প্রভাবশালীর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন? না কি ভিনরাজ্য়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের?গাড়িতে কি টাকা ভর্তি ২টি ব্য়াগ ছিল? ব্য়াগ ২টি কোথায় গেল? টাকা ভর্তি ব্য়াগ কি বিশেষ কাউকে দেওয়ার জন্য় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল?
রাজু ঝা কি বিশেষ কোনও বিষয়ে মুখ খুলতে চাইছিলেন? তিনি মুখ খুললে কি কোনও প্রভাবশালী বেকায়দায় পড়তেন? তাই কি পরিকল্পনামাফিক রাজুকে শেষ করে দেওয়া হল?
কয়লা মাফিয়া রাজু ঝা খুনে কার লাভ?
কিছুদিন আগে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, বীরভূমের কয়লা মাফিয়া, গরু মাফিয়া, সে আবার আমাদের বাঘের সঙ্গে সম্পর্ক তার, সেই একই জায়গা, সেই শক্তিগড়, সেই ল্যাংচার দোকান, হিসাব কষুন, একজন দাঁড়াল গাড়ি নিয়ে, ২ জন চলে গেল, সঙ্গে সঙ্গে গুলি করনেওয়ালা চলে এল, পুলিশ অনুপস্থিত হয়ে গেল, একদম হত্যা, পরিকল্পিত হত্যা, হত্যা হত্যা, বাংলার খোকাবাবুর বিরুদ্ধে, যারা কয়লা কারবারে জড়িত।
বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের কথায়, রাজু ঝা কোনও দিন অন্যের গাড়িতে বসতেন না, সেদিন বসেছিলেন। কখনও গাড়ির সামনে বসতেন না সেদিন বসেছিলেন। ফলে এটা সবটাই কন্সপিরেসি। রাজ্যপুলিশ সব জানত। ওরা ধামাচাপা দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু, কীভাবে যোগসূত্র তৈরি হল কয়লা মাফিয়া রাজু ও গরু ব্যবসায়ী লতিফের?
পুলিশ সূত্রে খবর, গরুপাচারকাণ্ডে নাম জড়ানোর পর কয়লা ব্যবসায় হাত জমান লতিফ! একাধিক ছোট ছোট কয়লা খাদানের কারবারে যুক্ত হতে শুরু করেন। এর মধ্য়ে জেল থেকে রাজু ছাড়া পেলে, তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে লতিফের।
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য় সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের কথায়, অপরাধ জগত চিরকাল ছিল। বিজেপি নেতাদের হোটেলে উঠে বসে থাকত। ফাঁস হয়ে যেত
হত্য়াকাণ্ডে উঠে আসছে আরেক তত্ত্বের কথা! আসানসোল, রানিগঞ্জ, অন্ডালের মতো খনি অঞ্চলে কান পাতলে শোনা যায়, এর অর্থ হল, গুন্ডা ট্যাক্স!
পুলিশ সূত্রে দাবি একসময়, এই লেভি-কারবারে একাধিপত্য ছিল মাফিয়া রাজুর। তারপর, ক্ষমতার হাতবদল হয় অনুপ মাজি ওরফে লালার কাছে। সেই সময় লেভির মাথায় চলে আসেন জনৈক আরও এক ব্যক্তি। তিনিই হয়ে ওঠেন সর্বময় কর্তা। মাঝে ইডি-সিবিআইয়ের তৎপরতায় লেভির কারবার বন্ধ হয়ে যায়।
২০২১ সালে, হাজতবাসের পর রাজু যখন ফেরেন, তখন সিবিআই-ইডির চাপে লালা। আরেক ব্যক্তির লেভি কারবার কার্যত বসিয়ে দিয়ে তাঁর সিন্ডিকেট সদস্যদের নিজের দলে নিয়ে চলে আসেন রাজু। পুরনো সাম্রাজ্য ফিরে পেয়ে ফের রাজার আসনে বসেন রাজেশ ঝা ওরফে রাজু। কিন্তু, তারপর হঠাৎই সব শেষ।