সৌভিক মজুমদার এবং উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: দশ ভাগের এক ভাগ লোক যদি কাজ করে থাকেন, তাহলে তাঁরা কেন টাকা পাবেন না? সবকিছু তো অবৈধ হতে পারে না। ১০০ দিনের কাজ নিয়ে মামলার শুনানিতে এই কথা বলল হাইকোর্টের (Calcutta High Court) প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। তদন্ত হলেও, নিরীহ মানুষের টাকা কেন আটকে থাকবে? কেন্দ্রর কাছে জানতে চাইল হাইকোর্ট। পাশাপাশি কাজ নিশ্চিত করার দায়িত্ব যে রাজ্য সরকারের (West Bengal Govt), তাও মনে করিয়ে দিল আদালত। 


আদালত কোনও অবৈধ কাজকে সমর্থন করে না। কিন্তু, কিছু লোক তো ১০০ দিনের প্রকল্পে বৈধভাবে কাজ করেছেন। রাস্তা তৈরি হয়েছে। তারা কেন বঞ্চিত হবেন? যাঁদের জব কার্ড ভুয়ো, তাঁরা টাকা পাবেন না ঠিক আছে। কিন্তু কারা আসল আর কারা নকল, সেটা তো খুঁজে বের করতে হবে। এখানে অনেক পচা আপেল আছে, তাই ভাল আপেল খুঁজে বের করতে হবে।


১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগে CBI তদন্তের দাবি জানিয়ে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। অন্যদিকে বকেয়া টাকার দাবিতে মামলা করেছে খেতমজুর কমিটি। ওই দুই মামলার শুনানিতে সোমবার প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যর বেঞ্চ কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে আপনাদের কাছে একটি compliance report পাঠানো হয়েছে, সেটা খতিয়ে দেখুন। তারপর টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। 


দশ ভাগের এক ভাগ লোক যদি কাজ করে থাকেন, তাহলে তাঁরা কেন টাকা পাবেন না? সবকিছু তো অবৈধ হতে পারে না। আপনারা চাইছেন CBI অনুসন্ধান করুক। তদন্ত করুন, কিন্তু নিরীহ মানুষের টাকা কেন আটকে থাকবে? প্রশ্ন তোলে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।


অন্যদিকে কেন্দ্রের তরফে দাবি করা হয়, ২০২১-২২ অর্থবর্ষের জন্য ওই প্রকল্পে যে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল, তা শেষ হয়ে গিয়েছে। রাজ্য সরকার হিসেব দেয়নি, ভুয়ো জবকার্ড হয়েছে, স্বচ্ছতার অভাব থাকায় টাকা পাঠানো যায়নি। বাজেট পুনর্বিবেচনা করতে হবে।


১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগে, কে পুলিশে FIR দায়ের করবে, তা নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির তরজা চরমে পৌঁছেছে। তবে এদিন হাইকোর্ট বলেছে, রাজ্য এবং জেলা প্রশাসন সহযোগিতা না করলে অনুসন্ধান শেষ হবে না। সেই সঙ্গে রাজ্য সরকারের উদ্দেশে আদালত নির্দেশ দিয়েছে, যতদিন না পর্যন্ত কেন্দ্র Complaince Report খতিয়ে দেখছে, ততদিন আপনারা আপনাদের শ্রমিকের স্বার্থ দেখুন, টাকা দিন।


এরই সঙ্গে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে - কাজের নিশ্চয়তা দেওয়া রাজ্য সরকারের দায়িত্ব। তারা সেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চাইতে পারে না। সেই কাজের টাকা অন্য কারও থেকে আসতেই পারে।


আর ১০০ দিনের কাজের চাকা নিয়ে তৃণমূল-বিজেপির বাগযুদ্ধের মধ্যেই আতান্তরে পড়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের আরতি মণ্ডল, সীমা নস্কররা। ভাঙড়ের ১০০ দিনের কর্মী আরতি মণ্ডল বলেন, 'কতদিনের কাজের টাকা আমাদের বাকি পড়ে আছে। এই টাকা আমাদের হকের টাকা। তৃণমূল চুরি করেছে না বিজেপি চুরি করেছে এটা আমি কি জানি। ভোট আসলে পরে খালি নেতারা বলে সব টাকা পেয়ে যাবি ভোটটা দে। কিন্তু আর কোন দেখা পাই।' 


আরেক উপভোক্তা বলেন, তৃণমূল টাকা চুরি করেছে, না বিজেপি টাকা চুরি করেছে আমরা এসব বুঝিনা। তৃণমূল আন্দোলন করছে না বিজেপি আন্দোলন করছে তাও বুঝিনা। আমরা আমাদের টাকা চাই। আমরা আমাদের কাজ চাই। ভাঙরের আরেকজন ১০০ দিনের কর্মী বলেন, 'যতবার চাইতে গেছি বলেছে দেবে। কে চুরি করেছে বলতে পারব না। খেটে খাই। তৃণমূল বিজেপি বুঝিনা। যে টাকা আমাদের বাকি আছে টাকা ফেরত দিন।' 


মঙ্গলবার ফের কলকাতা হাইকোর্টে ১০০ দিনের কাজের মামলার শুনানি হবে। কিন্তু, এই গরিব মানুষগুলির হাতে টাকা পৌঁছবে কবে?