হিন্দোল দে, কলকাতা: বর্ষবরণের আগে শহরে ফের বেপরোয়া গতি। বালিগঞ্জ ফাঁড়ির (Kolkata Road Accident) কাছে কুইন্স পার্কে ফুটপাতে উঠে পড়ে গাড়ি। সকাল ৬টা নাগাদ দুর্ঘটনা ঘটে। গড়িয়াহাটের দিক থেকে পার্ক সার্কাসের দিকে যাওয়ার সময়, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফুটপাতের ওপর উঠে গাছে ধাক্কা মারে গাড়িটি। গাছ উপড়ে, পাশের লাইটপোস্টও দুমড়ে যায়। গাড়িতে চালক-সহ ৪ জন ছিলেন। গাড়ি এবং তার চালককে আটক করেছে বালিগঞ্জ থানার পুলিশ। মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোয় দুর্ঘটনা বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান পুলিশের। 


ফিরে দেখা...
২০২৩ সাল জুড়ে একের পর এক ভয়ঙ্কর সড়ক দুর্ঘটনার সাক্ষী থেকেছে শহর কলকাতা-সহ গোটা রাজ্য। এর মধ্যে অগাস্ট মাসের একটি ঘটনা নিয়ে রীতিমতো তেতে উঠেছিল মহানগরের একাংশের পরিস্থিতি। বেহালা চৌরাস্তার ওই ঘটনায় সৌরনীল সরকার নামে এক দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়ার মৃত্যুতে তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছিল। ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ দ্বিতীয় শ্রেণির ওই পড়ুয়া বাবার সঙ্গে স্কুলে যাচ্ছিল। বেহালা চৌরাস্তার মোড়ে একটি ট্রাক শিশুটিকে ধাক্কা মারে। সঙ্গে সঙ্গে পড়ুয়ার মৃত্যু হয়। অভিভাবক তথা শিশুটির বাবাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁকে এসএসকেএম-এর ট্রমা কেয়ার সেন্টারের নিয়ে যাওয়া হয়। পড়ুয়ার মৃত্যুর পরেই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে গোটা চত্বর। পুলিশের গাড়ি-বাইক জ্বালিয়ে দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পাল্টা লাঠিচার্জে জখম হন স্থানীয় বাসিন্দারাও। ছুটে আসেন স্কুলের হেড মাস্টারমশাই। ততক্ষণে অবশ্য খুদের দেহে আর প্রাণ নেই।
এই ঘটনার আগে, মে মাসে, কলেজে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে মুর্শিদাবাদে ভয়ঙ্কর পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় এক পড়ুয়ার। বাড়ি থেকে বাইকে করে জাতীয় সড়ক দিয়ে কলেজে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন মহম্মদ কাইফ নামে বছর একুশের ওই পড়ুয়া। ঘটনার প্রতিবাদে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় মুর্শিদাবাদের শামসেরগঞ্জ থানার নতুন ডাকবাংলা ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে ।
মাসদুয়েক আগে নভেম্বর মাসে, ভাইফোঁটার দিন, আর এক মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনার খবর শুনেছিল রাজ্য। ফোঁটা দেবেন বলে ভাইয়ের সঙ্গে বাইকে চড়ে মিষ্টি কিনতে গিয়েছিলেন বছর পঁচিশের রীতা সাউ। কিন্তু আর ফেরা হয়নি তাঁর। রীতার বাপের বাড়ি ঝাড়খণ্ডের মহেশপুরের কানিঝাড়া গ্রামে। শ্বশুরবাড়ি বীরভূমের মাড়গ্রামের ছোটচৌকি গ্রামে। ভাইফোঁটার দিন সকালে ভাইয়ের বাইকে চেপে নলহাটি এলাকায় আসেন মিষ্টি কিনতে। নলহাটিতে তাদের বাইকের পিছনে সজোরে ধাক্কা দেয় একটি ট্রাক্টর। ট্রাক্টরের ধাক্কায় রাস্তায় ছিটকে পড়েন রীতা ও তাঁর ভাই। তড়িঘড়ি রীতাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।


এরকম ঘটনা রাজ্যের নানা প্রান্তে আকচার ঘটেছে গত বছর। নাগরিকদের প্রশ্ন, দুর্ঘটনা এড়াতে কতটা সজাগ প্রশাসন? আর প্রশাসনের বক্তব্য, ট্রাফিক আইন নিয়ে বহু সময়ই যথেষ্ট গা-ছাড়া মনোভাব দেখা যায়। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বড় উদ্বেগজনক যার রেশ ধরা রইল বছরের শেষ দিনেও।


আরও পড়ুন:বর্ষবরণে যাত্রী সুরক্ষায় জোর, কলকাতা মেট্রোয় আঁটসাঁট নিরাপত্তা