শুভেন্দু ভট্টাচার্য, অনির্বাণ বিশ্বাস ও সুনীত হালদার, কলকাতা: বার বার আপত্তি জানানো সত্ত্বেও উত্তরপ্রদেশ, বিহারের মতো রাজ্য থেকে বাংলায় গরু ঢোকানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এ বার সেই অভিযোগে সরব হলেন তৃণমূলের (TMC) নেতা-মন্ত্রীরা। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাকে কালিমালিপ্ত করছে বলে অভিযোগ দলের রাজ্য সহ-সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের (Rabindranath Ghosh)। যে রাজ্য থেকে গরু আসছে, সেখানে কেন তদন্ত নয়, প্রশ্ন তুললেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও (Firhad Hakim)। তার পাল্টা রাজ্যের বিরুদ্ধে অসহযোহিতার অভিযোগ তুলেছে বিজেপি (BJP)। 


সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে গরুপাচারের বিষয়টি সামনে আসে কয়েক বছর আগেই। তাতে সীমান্তরক্ষীবাহিনীর (BSF) প্রাক্তন কমান্ডার সতীশ কুমারকে গ্রেফতারও করা হয়। সতীশ এবং তাঁর পরিবারের নামে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির হদিশ মেলে বলে জানা যায় তদন্তকারী গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে। যদিও কয়েক মাস পরই জামিন পেয়ে যান সতীশ। তাই গরুপাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হাতে থাকা বিএসএফ-এর ভূমিকা নিয়ে কেন তদন্ত হবে না, প্রশ্ন তুলে আসছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। 


সেই আবহেই বিতর্কে নয়ামাত্রা যোগ করলেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর বক্তব্য়, "এত বছর ধরে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র দফতর কি ঘুমিয়েছিল? কেন্দ্র নিজের এই ব্যর্থতা ঢাকতে বিরোধী দলের নেতাদের গায়ে এই গরুপাচারের ছাপটা ফেলে, বিরোধী দলগুলিকে কালিমালিপ্ত করতে চাইছে।"


তার পাল্টা রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন (Sukanta Majumdar), "মাত্র ১৫ কিলোমিটার বিএসএফের আওতায় থাকে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অসহযোগিতার জন্য পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় তারকাঁটার বেড়া দেওয়া সম্ভব হয়নি। ল্যান্ড পাওয়া যায়নি বলে।"


গরুপাচার মামলায় এই মুহূর্তে তোলপাড় গোটা রাজ্য। বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হেফাজতে রয়েছেন। সেই আবহে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপোড়েন নতুন মাত্রা পেয়েছে। 


সম্প্রতি কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে গরুপাচারের একাধিক ভিডিও নেটমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যেগুলির সত্যতা যাচাই করেনি এবিপি আনন্দ। সেই ভিডিওগুলির কোনওটিতে কাঁটাতারের উপর কাঠের পাটাতন রেখে এপার থেকে ওপারে একের পর এক গরু পাঠিয়ে দেওয়ার দৃশ্য ধরা পড়েছে।  ঠিক কোথায় ওই ভিডিও তোলা হয়, জানা যায়নি তাও। তবে কয়েকজনকে নিজেদের মধ্যে বাংলায় কথা বলতে শোনা গিয়েছে। 


সেই ভিডিও নিয়েও কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেছেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর কথায়, "এই দায়িত্ব কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এড়াতে পারে না। কারণ তাদের অধীনেই এই বর্ডার, পাচার-টাচার সবকিছু। যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ৫-১০ মিনিট তো নয়! কখনও চড়কের মতো বানিয়ে, কখনও মাচা বেঁধে পাচার করা হচ্ছে। সর্ষের মধ্যেই ভূত রয়েছে।"


তাই যে যে রাজ্য থেকে বাংলায় গরু ঢুকছে, সেখানে কেন তদন্ত শুরু হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ফিরহাদও। তিনি বলেন, "এটা এদের দলের তরফে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন। গরু কোথা দিয়ে আসছে, কোন কোন রাজ্য থেকে আসছে, সেই রাজ্যে কেন গরু পাচার নিয়ে সেখানে তদন্ত হচ্ছে না, এটা বড় অদ্ভুত লাগছে।"


এর পাল্টা সুকান্তর যুক্তি, "এই গরু ইলামবাজারের হাট থেকে বর্ডার পর্যন্ত কীভাবে পৌঁছচ্ছে? এটা তো রাজ্য সরকারের পুলিশের দেখার কথা। তারা টাকার ভাগ পায় বলে চুপ করে থাকে।" গরুপাচার নিয়ে দু'তরফে যুক্তি, পাল্টা যুক্তি দেওয়া হচ্ছে বিগত কিছু দিন ধরেই। বাংলার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে গরুপাচার হচ্ছে বলে ভূরি ভূরি অভিযোগ সামনে এলেও, সেগুলি কোথা থেকে আসছে, এর নেপথ্যে বিএসএফ-এর ভূমিকা কী, ভিন্ রাজ্য থেকে বাংলায় গরু পাঠানোর নেপথ্য়ে কারা, বাংলায় প্রভাবশালীদের ভূমিকাই বা কী, সেই নিয়ে ধোঁয়াশা অব্যাহত।