প্রকাশ সিন্হা, পার্থপ্রতিম ঘোষ, সন্দীপ সরকার, কলকাতা : এতদিন আসছিলেন! যাচ্ছিলেন! বাইট দিচ্ছিলেন! আবার গাড়ি চেপে চলে যাচ্ছিলেন! অবশেষে রবিবার সেই তাপস মণ্ডলকেই ( Tapas Mondal ) ফতার করেছে CBI। নিয়োগ-দুর্নীতির মামলায় ( Recruitment Scam ) একের পর এক অভিযুক্তকে হেফাজতে নিচ্ছে সিবিআই ( CBI ) । সামনে আসছে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের চাঞ্চল্য়কর সব তথ্য়।
সম্প্রতি তাপসের সঙ্গে কুন্তলের যে বাগযুদ্ধ শুরু হয়েছে, তাপস গ্রেফতার হতেই তা চরমে উঠেছে ! কিন্তু, এতদিন পর কেন গ্রেফতার করা হল মানিক ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডলকে?
CBI সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, মূলত ৩টি কারণে গ্রেফতার হয়েছেন মানিক ভট্টাচার্য ঘনিষ্ঠ তাপস।
- প্রথমত, নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ হলেন তাপস। তিনি যে টাকা নিয়েছেন এবং দিয়েছেন, তা যে বেআইনি কাজের জন্য, সেটা জেনেবুঝেই করেছেন।
- দ্বিতীয়ত, টাকা লেনদেনের হ্যান্ডলার হিসেবে কাজ করেছেন মানিক ভট্টাচার্য ঘনিষ্ঠ তাপস।
- তৃতীয়ত, সূত্রের দাবি, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ যে অডিও ক্লিপ CBI-এর হাতে তুলে দিয়েছেন, তাতে তাপসকে বলতে শোনা যায়, ৫০ লক্ষ টাকা দিলে তিনি CBI বা ইডি-র কাছে মুখ খুলবেন না।
কোথা থেকে টাকা এল, কোথায় সেই টাকা গেল? - কিন্তু, কার হাত থেকে টাকা কার কাছে গেছে? মাথা কে? এজেন্ট-সাব এজেন্টদের নিয়ে নাড়া চাড়া হলেও, আসল মাথার খোঁজ কোথায় ? এই প্রশ্ন উত্তর খুঁজে পেতেই এখন CBI-এর নজরে তাপস মণ্ডল, কুন্তল ঘোষ, নিলাদ্রী ঘোষের ত্রিভূজ! এই কারণেই স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায়, সোমবার মোট সাতজনকে আলিপুরের বিশেষ CBI আদালতে তোলা হলেও, তাপস, কুন্তল ও নিলাদ্রীকেই শুধুমাত্র হেফাজতে চেয়ে আর্জি জানায় CBI. আদালতে তাদের আইনজীবী দাবি করেন, ওই তিনজনের বিরুদ্ধে তাঁদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। কোথা থেকে টাকা এল, কোথায় সেই টাকা গেল? এবং এর সঙ্গে কোন প্রভাবশালীর যোগ রয়েছে, তা খুঁজে বের করতে হবে। তার জন্য তিনজনকে একসঙ্গে বসিয়ে জেরা করতে হবে। ওই তিনজনই টাকা আদায় করেছেন।
চাপ আছে বলেই গ্রেফতার ?
অন্যদিকে কুন্তল ঘোষের আইনজীবী অভিযোগ করেন, ED গ্রেফতার করার আগে তাঁর মক্কেল তিনবার CBI দফতরে হাজিরা দিয়েছিলেন। তখন গ্রেফতার করা হয়নি। বলাই যায়, তখন ক্লিনচিট দেওয়া হয়েছিল।
এদিন তাপস মণ্ডলের হয়ে আইনজীবী বলেন, CBI-এর উপর শুধুমাত্র চাপ আছে বলেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অন্যদিকে নিলাদ্রী ঘোষের হয়ে আইনজীবী সওয়াল করেন, তিনি কাউকে চাকরির পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেননি।
নিলাদ্রীর আইনজীবী CBI-এর উদ্দেশে প্রশ্ন তোলেন, টাকা নেওয়ার অভিযোগ তোলা হচ্ছে। কাদের থেকে টাকা নিয়েছে? তখন বিচারক বলেন - কাদের থেকে টাকা নিয়েছেন, সেটা আমি ইতিমধ্যে তদন্তকারীদের কাছে জানতে চেয়েছি।
সবপক্ষের সওয়াল জবাব শোনার পর, কুন্তল, তাপস ও নিলাদ্রীকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত CBI হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। বাকি ৪ জন এজেন্টকে দোসরা মার্চ পর্যন্ত জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
এই সব দিক খতিয়ে দেখেই রবিবার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাপস মণ্ডলকে গ্রেফতার করে সিবিআই।
গত ৪ দিনে ৯ জন অভিযুক্তকে হেফাজতে নিয়েছে CBI! হদিশ মিলেছে প্রায় ১০ কোটি টাকার লেনদেনের! কিন্তু, চাকরি বিক্রির এই টাকা কাদের পেটে গেছে? মাথা কে? মূল চাঁই কে ? তাঁরা কি আড়ালেই থেকেই যাবে ?