কলকাতা: তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণকে আরও ৫ দিনের হেফাজতে চাইল সিবিআই। 'তল্লাশির সময় প্রচুর নথি উদ্ধার হয়েছে। এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন জীবনকৃষ্ণ। কোটি কোটি টাকা তুলেছেন অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের থেকে। যারা মামলার চার্জশিটে অভিযুক্ত, তাঁদের টাকা পাঠানো হয়েছে। ফোন পুকুরে ফেলে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছেন। জীবনকৃষ্ণকে ফের হেফাজতে চেয়ে আদালতে সওয়াল সিবিআইয়ের। 'ফোন সিবিআই সিজ করেছিল, রোজ মেয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলতেন। রাগে ফোন পুকুরে ফেলে দেন, জামিন চেয়েও আদালতে দাবি জীবনকৃষ্ণর আইনজীবীর। 'তাই বলে পুকুরে ফেলবেন! যে যে নথি পাওয়া গেছে, সেগুলি তো আপনার মক্কেলের বাড়িতে থাকার কথা নয়'।


জীবনকৃষ্ণর আইনজীবীকে পাল্টা বিচারকের
'উনি একটা রাজনৈতিক দল করেন, অনেক শত্রু আছে। যেসব বেআইনি নথির কথা বলা হচ্ছে, সব ওনার বাড়ির থেকে পাওয়া যায়নি। কেউ সেখানে ফেলে যেতে পারে, একজন নির্দোষকে হেনস্থা করা হচ্ছে। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন, এলাকায় অশান্তি হচ্ছে'। জামিন চেয়ে সওয়াল তৃণমূল বিধায়কের আইনজীবীর। বিধায়কের গ্রেফতারির কথা বিধানসভায় জানানোর প্রসঙ্গে প্রশ্নে সিবিআই। বিধায়কের গ্রেফতারির তথ্য স্পিকারকে দেননি? প্রশ্ন বিচারকের। গ্রেফতারির দিন ৩টে ১০ মিনিটে জানানো হয়, দাবি তদন্তকারী আধিকারিকের। 'সময়টা দেখুন, আপনাদের চিঠি বিধানসভায় পৌঁছেছে ৩টে ৫ মিনিটে! আর আপনারা চিঠি দিচ্ছেন ৩টে ১০ মিনিটে! এটা কীভাবে?, সিবিআইকে প্রশ্ন বিচারকের। 



তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার বাড়িতে সিবিআই তল্লাশির দিন থেকেই শিরোনামে উঠে এসেছিল পুকুরে তাঁর নিজের দুটি মোবাইল ছুড়ে ফেলার ঘটনা! এদিন যা নিয়ে আদালতের ভিতরে ও বাইরে সম্পূর্ণ ভিন্ন দাবি করলেন তাঁর আইনজীবী। অন্যদিকে তৃণমূল বিধায়কের দুটি ফোন। দিল্লির ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে সিবিআই। 



নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার বাড়িতে সিবিআই তল্লাশির দিনই তৈরি হয়েছিল নাটকীয় পরিস্থিতি! কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, তথ্য লুকোতে, তল্লাশি অভিযানের মাঝপথে নিজের দুটি মোবাইল ফোন বাড়ির পাশের পুকুরে ছু়ড়ে ফেলে দিয়েছিলেন বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক। 


প্রায় তিনদিন ধরে পুকুরের জল ছেঁচে মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে পুকুরের মাটি সরিয়ে শেষে উদ্ধার করা হয় মোবাইল ফোন দুটি। সেই ঘটনা নিয়ে এদিন আদালতের ভিতর ও বাইরে দু'রকম দাবি করলেন ধৃত তৃণমূল বিধায়কের আইনজীবী!


গত শুক্রবার বেলা ১২টা থেকে মুর্শিদাবাদের আন্দিতে, তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার বাড়িতে ম্য়ারাথন তল্লাশি শুরু করে সিবিআই। তাঁর বাড়িতে দোকানে, পুকুরে, বাগানে, ঝোপে-জঙ্গলে তথ্য-প্রমাণের খোঁজে চলে চিরুণি তল্লাশি!



সিবিআইয়ের অভিযোগ, তদন্তকারীদের অসাবধানতার সুযোগে নিজের দুটি মোবাইল
ফোন পুকুরে ছুড়ে ফেলে দেন তৃণমূল বিধায়ক। শুক্রবার এই প্রসঙ্গটি আদালতের শুনানিতেও ওঠে!


সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, নিজের দুটি মোবাইল ফোন ফেলে দিয়ে তথ্য প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেন জীবনকৃষ্ণ সাহা। পাল্টা তৃণমূল বিধায়কের আইনজীবী বলে ওঠেন, ফোনটা সিবিআই বাজেয়াপ্ত করেছিল। 


তাঁর মেয়ে শিলিগুড়ির সকুলের পড়ে। রোজ মেয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলতেন। তারওপর রাগ থেকেই তিনি মোবাইল ফোনটি ফেলে দেন। বিচারক প্রশ্ন করেন, তাই বলে পুকুরে? কিন্তু আদালতের বাইরে এসে এদিন ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যান জীবনকৃষ্ণের আইনজীবী!


পুকুর থেকে উদ্ধার করা তৃণমূল বিধায়কের দুটি ফোনই। দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সিবিআই সূত্রের খবর, জীবনকৃষ্ণ সাহার দুটি ফোনই অ্য়ানড্রয়েড এবং ওয়াটার রেসিসট্য়ান্ট। ফলে মোবাইলগুলির খুব বেশি ক্ষতি হয়নি বলেই অনুমান সিবিআইয়ের। 


অফিসাররা মনে করছেন, ফোনে থাকা তথ্য রিট্রিভ করা সম্ভব। এদিন আদালতে তোলা হলে তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহাকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতে থাকার নির্দেশ দেয় আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালত।