কলকাতা: স্কুল শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে (SSC Recruitment Scam) জড়িত থাকার কথা বরাবর অস্বীকার করে আসছেন তিনি। কিন্তু রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী  পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) কথায় আমল দিতে নারাজ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (CBI)। বরং পার্থই নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডের মূলচক্রী বলে দাবি তাদের। সিবিআই সূত্রে খবর, পার্থ নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করলেও, তাঁর বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ কিন্তু অন্য কথা বলছে। বরং তিনিই দুর্নীতিকাণ্ডের 'মাস্টারমাইন্ড', তদন্তে নেমে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা এমনটাই মনে করছেন বলে সূত্রের খবর। 


শনিবার পার্থকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে সিবিআই


নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে আগেই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টেরেটের হাতে গ্রেফতার হন পার্থ। আদালতে আবেদন জানিয়ে শুক্রবার তাঁর হেফাজত পেয়েছে সিবিআই। একই সঙ্গে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কেও গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার দু'জনকেই জেরা কবে সিবিআই। তবে পার্থর ব্যাপারে গোয়েন্দারা সমস্ত তথ্যপ্রমাম নিয়ে তৈরি বলে জানা গিয়েছে। 


সিবিআই সূত্রের খবর, নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়টি কারা নিয়ন্ত্রণ করত, তাতে পার্থর কী ভূমিকা ছিল, শনিবার তা বিশদে জানতে চাওয়া হবে পার্থর কাছে। পার্থর দাবি, তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানতেন না। কমিটি গঠনের ফাইলে সই করেছিলেন মাত্র। কিন্তু গোয়েন্দাদের প্রশ্ন, তিনি না জানলে, কারা জানত! শনিবার এই সব প্রশ্নের উত্তরই চাওয়া হবে পার্থর কাছে। 


সিবিআই সূত্রে আরও জানা গিয়েছে যে, কল্যাণময়ের জন্যও প্রশ্নসূচি তৈরি রাখা হয়েছে। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হবে, তিনি কার নির্দেশে নিয়োগপত্র দিয়েছেন! যদিও আদালতে কল্যাণময়ের আইনজীবী দাবি করেছেন, তিনি কোনও নিয়োগপত্র দেননি। সিবিআই সূত্রে দাবি, পার্থ এবং কল্যাণময়ের বয়ানে অসঙ্গতি থাকলে দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার পরিকল্পনা রয়েছে।


আরও পড়ুন: Cattle Smuggling Case: স্কুল শিক্ষিকা হয়ে ৫ কোটি টাকার সম্পত্তি কেনার অর্থ পেলেন কোথায়! অনুব্রত-কন্যাকে প্রশ্ন সিবিআই-এর


স্কুলে গ্রুপ-সি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থকে গতকাল হেফাজতে পায় সিবিআই। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময়েরও সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। যে বাগ কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট, সেখানেও বলা হয়েছিল, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অনুমোদনের ভিত্তিতে যে উপদেষ্টা কমিটি হয়েছিল তা বেআইনি।


এর পাশাপাশি, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের নেতৃত্বাধীন কমিটির রিপোর্টে আরও বলা হয়, মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর, ৩৮১ জনকে সুপারিশপত্র দেওয়া হয়েছিল। এসএসসি-র অফিস থেকেই এই সুপারিশপত্র দেওয়া হয়েছিল। স্ক্যান সই ব্যবহার করে এই সুপারিশপত্র দেওয়া হয়। সৌমিত্র সরকার এবং শান্তিপ্রসাদ সিন্হা এই কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন।


প্রয়োজনে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ পার্থ-কল্যাণময়কে


৩৮১ জনের মধ্যে ২২২ জনের নাম কোনও প্যানেল বা ওয়েটিং লিস্টে ছিল না। এরা পার্সোনালিটি টেস্টেও অংশগ্রহণ করেননি। কারণ, এঁরা কেউ লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেননি। অশোককুমার সাহা, সৌমিত্র সরকার, শান্তিপ্রসাদ সিন্হার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে পদক্ষেপ করা উচিত। কারণ, এঁরা প্যানেলের পুনর্মূল্যায়ন করে র‍্যাঙ্ক পরিবর্তন করেছে। প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরে শূন্যপদের তথ্য নিয়ে বেআইনিভাবে সেই তথ্য কাজে লাগিয়েছেন শান্তিপ্রসাদ সিন্হা এবং সৌমিত্র সরকার। শান্তিপ্রসাদ সিন্হা নিজে ভুয়ো সুপারিশপত্র কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে দিতেন। কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় সেই সুপারিশ পত্রের ভিত্তিতে টেকনিকাল অফিসার রাজেশ লায়েককে দিয়ে নিয়োগপত্র তৈরি করতেন। সিডি, পেনড্রাইভ, মেলের মাধ্যমেও এই সুপারিশপত্র তাঁরা পেতেন। নিয়োগপত্র দেওয়া হত এসএসসি-র নব নির্মিত ভবনে। বিজ্ঞপ্তিতে এই ভবনের নাম ছিল না। প্যানেল প্রকাশের সময় এসসি স্বচ্ছতা বজায় রাখেনি। আদালতের নির্দেশে প্যানেল ওয়েবসাইটে আপলোড করার আগেও তাতে পরিবর্তন করা হয়। ২১শে সেপ্টেম্বর ফের আদালতে তোলা হবে কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে।