সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, মোহন দাস ও প্রদ্যোৎ সরকা, কলকাতা: প্রকাশ্য মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। তার পর সরকারি উদ্যোগে হাতে হাতে চাকরির নিয়োগপত্র বিলি হয়। কিন্তু সেই নিয়োগপত্র নিয়েই এখন বিতর্ক (Fake Appointment Letter)। বিতরণ করা চাকরির নিয়োগপত্রের কয়েকটি কি ভুয়ো, চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের অভিযোগ ঘিরে, উঠছে এই প্রশ্ন। আর তা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা (West Bengal Government)। 


চাকরির নিয়োগপত্রের কয়েকটি কি ভুয়ো!


স্কুল শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। তার মধ্যেই এ বার কারিগরি শিক্ষায় চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের সঙ্গে প্রতারণার বিস্ফোরক অভিযোগ উঠল। সরকারি উদ্যোগে দেওয়া চাকরির কিছু নিয়োগপত্র ভুয়ে বলে উঠছে অভিযোগ। অভিযোগ করছেন খোদ চাকরিপ্রার্থীরাই। 


হুগলির এক চাকরিপ্রার্থী ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, "আমি ওই কোম্পানিতে ফোন করে যোগাযোগ করি। হোয়াটসঅ্যাপে ডকুমেন্টস চায়। আমি পাঠিয়ে দিলেও কোনও রিপ্লাই পাওয়া যায়নি। একদিন পর হুগলির ইনস্টিটিউট থেকে ফোন করে বলা হয়, যে জেরক্স কাগজ বা লিস্ট দেওয়া হয়েছে সেটা অ্যাপয়েমেন্ট লেটার নয়। আমরা যতক্ষণ না কল করি, বা কোম্পানি কল করে, তোমরা যাবে না। এখন বুঝতে পারছি, পুরোটাই ফ্রড। আমাদের এই ভাবে হেনস্থা করার কি দরকার ছিল!"


গত ১২ সেপ্টেম্বর, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে, উৎকর্ষ বাংলার অনুষ্ঠানের পর এই নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু, হুগলির আবেদনকারীদের একাংশের দাবি, নিয়োগপত্রে গুজরাতের যে সংস্থার নাম লেখা ছিল, সেখানে যোগাযোগ করে তাঁরা জানতে পারেন, এই চিঠি ভুয়ো। আর এক চাকরিপ্রার্থী মহম্মদ আজিম গায়েন বলেন, "এটা থেকে বোঝা যাচ্ছে, এরা চাকরি দেবে বলে আশা দিচ্ছে, অথচ চাকরি দিচ্ছে না। পুরোটাই ফ্রড। সরকার তো প্রথমেই ধাক্কা দিয়ে দিল। এরপর তো চাকুরির ইন্টারভিউ দিতে গেলে তো, ভাবনা তো থাকবেই।"


আরও পড়ুন: Primary Teacher Recruitment: হাইকোর্টের নির্দেশে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের, কতজনের নিয়োগ?


সম্প্রতি আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী গুজরাতের ওই সংস্থার সেন্টার ম্যানেজার বেদপ্রকাশ সিং জানিয়েছেন, তাঁরা গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, হিমাচলপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে এ ধরনের প্রশিক্ষণের কাজে যুক্ত। এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে এ নিয়ে তাঁদের কোনও যোগাযোগই হয়নি। তাঁরাও এ রাজ্যের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেননি। চিঠিতে তাঁর ফোন নম্বর-সহ সংস্থার সব তথ্য বেআইনি ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বেদপ্রকাশ। 


চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ নিয়ে প্রতিক্রিয়া চেয়ে কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনকে ফোন করা হলেও, তিনি ফোন ধরেননি। ১২ সেপ্টেম্বরের অনুষ্ঠানের দিন, কতজন নিয়োগপত্র পেয়েছেন, তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় বিরক্তি প্রকাশ করেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে বলতে শোনা যায়, "কারা চিঠি পেয়েছে এখনও পর্যন্ত? সবাই বলছে, না না। মমতা বলছে, ও চিঠিটা আজকে যাবে! যাদের পার্টিসিপেট করেছিলেন, এবং প্লেসমেন্ট হয়েছে কীভাবে জানবে? মিস্টার কৃষ্ণ আমার নিজের কনফিউশন হচ্ছে। ওটা কি আজকে দেবে? তোমরা দেবে কী করে এখন। মানে পরে দিয়ে দেবে।"


বলা বাহুল্য, গোটা ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু আধিকারী বলেন, "পুরোটাই ভুয়ো। যেভাবে হেনস্থা করেছে। এদের সরানো ছাড়া পরিত্রাণের উপায় নেই।"


সংশ্লিষ্ট সংস্থা বাংলার সঙ্গে এমন সমঝোতার কথাই অস্বীকার করছে


তবে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন,  "যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের সচেতন ভাবে কাজ করা উচিত ছিল। আমরা চাই বিভাগীয় তদন্ত হোক। যাঁদের গাফিলতিতে এই ঘটনা, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা উচিত। অনেক পুরনো বাম কর্মীরাও আছেন, তাঁরা সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলতে এটা করা হচ্ছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা উচিত। মুখ্যমন্ত্রী খোঁজ নিচ্ছেন।" কিন্তু যাঁদের নিয়োগপত্র নিয়ে এই অভিযোগ উঠছে, তাঁদের ভবিষ্যৎ কী হবে? সেটাই এখন সবচেয়ে প্রশ্ন।