কলকাতা: প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি দুর্নীতি মামলায় এই প্রথম ৫০ জন শিক্ষককে তলব করেছে সিবিআই। অভিযোগ ওঠে, এই শিক্ষকরা টাকার বিনিময়ে পছন্দ মতো জায়গায় পোস্টিং পেয়েছেন। এর আগে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় একে ডিজাইনড কোরাপশন অর্থাৎ পরিকল্পিত দুর্নীতি বলে মন্তব্য করেন।


নিজাম প্যালেসে তলব: আদালতের নির্দেশে প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে এই নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করে সিবিআই। এরপরই আজ ৫০ জন শিক্ষককে নিজাম প্যালেসে তলব করা হয়েছে। সিবিআই সূত্রে খবর, পোস্টিং দুর্নীতি মামলায় চলতি সপ্তাহে মোট ৪০০ জন শিক্ষককে ধাপে ধাপে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এরপর হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা দেবে সিবিআই।  


পোস্টিং দুর্নীতির মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের নির্দেশে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেল সুপ্রিম কোর্ট। হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্য়ালেঞ্জ করে সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন মানিক ভট্টাচার্য। এ দিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায়কে সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের বিষয়টি জানান হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল।


'ডিজাইনড কোরাপশন': পোস্টিং দুর্নীতিতে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখে শোনা গিয়েছিল ডিজাইনড কোরাপশনের কথা। এর পর সেই মামলায় ইডিকেও যুক্ত করতে নির্দেশ দেন বিচারপতি। প্রযোজনে যে শিক্ষকদের পোস্টিং নিয়ম মেনে হয়নি বলে অভিযোগ, সেই শিক্ষকদেরও ইডি জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে বলে জানিয়ে দেয় আদালত। 


পোস্টিং দুর্নীতিতে 'ডিজাইনড করাপশন'।  আর সেই পরিকল্পিত দুর্নীতি মামলার তদন্তে  জোড়া কেন্দ্রীয় সংস্থা। এই মামলায় এবার ইডিকেও যুক্ত করতে নির্দেশ দেয় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।  প্রয়োজন মনে করলে ৩৫০ জন শিক্ষককে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে ইডি। এই ৩৫০ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধেই, দুর্নীতির মাধ্যমে পোস্টিং নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। হাইকোর্টের নির্দেশের কপিতে বলা হয়, ২০২১ সালের ৬ জুলাই একটি শূন্য়পদের তালিকা প্রকাশ করে পর্ষদ। যেখানে বলা হয়, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া, বীরভূম ও হুগলিতে 'হোম ডিস্ট্রিক্টে' শূন্যপদ নেই। ফলে অন্য়ান্য় জেলায় চাকরি নেন ওই চার জেলার বহু শিক্ষক। 


এর ঠিক ২৩ দিন পর, ৩০ জুলাই ফের একটি শূন্যপদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। যার ভিত্তিতে কয়েকজন প্রার্থীকে এমন জেলায় পোস্টিং দেওয়া হয়, যেখানে প্রথম তালিকায় শূন্য়পদ নেই বলে জানানো হয়েছিল। দুর্নীতি না হলে এমনটা কীভাবে সম্ভব? প্রশ্ন তুলে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মামলাকারীরা। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এদিন বলেন, এভাবে যদি ৪০০ জনের থেকে ১ লক্ষ টাকা করেও নেওয়া হয়, তাহলেও ৪ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে!


মানিক ভট্টাচার্যকে জিজ্ঞাসাবাদ:  এর পরই আদালতের নির্দেশে, মানিক ভট্টাচার্যকে এই মামলায় প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। চলতি মাসের শুরুতেই, প্রাথমিকে শিক্ষক পোস্টিং দুর্নীতি মামলায় FIR দায়ের করে ED। যেখানে অভিযুক্ত হিসাবে নাম রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তৎকালীন সভাপতি এবং পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের।


আর এই মামলাতেই আদালত বলে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই শিক্ষকরা চাইলে মামলার নথি সংগ্রহ করতে পারবেন। তার জন্য একটি বাংলা এবং ইংরেজি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিতে হবে।  যেখানে থাকবে মামলাকারীর আইনজীবীর নম্বর। ৭ দিনের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। ২৮ অগাস্ট মামলার পরবর্তী শুনানি।