আশাবুল হোসেন, কলকাতা: 'এবার তোর মরা গাঙে... বান এসেছে জয় মা বলে ভাসা তরী' । কেন্দ্রের আর্থিক বঞ্চনা এবং গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধের অভিযোগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ( Mamata Banerjee )  ২ দিনের ধর্না ( Dharna ) । ৩০ ঘণ্টার সেই ধর্না মঞ্চ থেকেই ডিএ আন্দোলনকারীদের করলেন তীব্র ভাষায় আক্রমণ। এজেন্সিকে নিয়ে আক্রমণ করলেন বিজেপিকে। চিরকুটে চাকরি নিয়ে নিশানায় বামেরা। এসবের মাঝেই নানা সময় নানা মুডে ধরা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়। কখনও মাতলেন আড্ডায়, কখনও গলা মেলালেন গানে।

মুখ্যমন্ত্রী ডুয়েটও গাইলেন তথ্য-সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনের সঙ্গে। করোনাকালে মাকে হারিয়েছেন বাবুল সুপ্রিয়।
এই গান শুনে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তিনি, চোখে নেমে আসে জল।

এক সময় ধর্নামঞ্চে গান ধরলেন বাবুলও ( Babul Supriyo )। ঝড়ের কাছে রেখে দিলেন নিজের ঠিকানা, হাসলেন, কাঁদলেন...এদিন ধর্না মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন যাদবপুর, কলকাতা ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। গানে গানে আন্দোলনের সুর চড়া করেন তাঁরাও। তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের সঙ্গে গলা মেলান মমতাও....'বাঁধ ভেঙে দাও বাঁধ ভেঙে দাও..'।  পঞ্চায়েত ভোটের আগে, এই ধর্না মঞ্চ থেকেই ৬ ছাত্র-যুবকে মমতা তৈরি করে দেন ছাত্র-যুবদের ব্যান্ড, জয়ী।

শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যেয় নন, গানে গানে গলা মেলাতে দেখা যায় কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, দোলা সেন, শশী পাঁজাদেরও। অরূপ বিশ্বাসকে দেখা যায় তবলা বাজাতে। চমকের এখানেই শেষ নয়। ধর্না মঞ্চেই তৃণমূলে যোগ দেন প্রয়াত অভিনেতা তরুণ কুমারের নাতি সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়।

এই দুদিন আগাগোড়া আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে ডিএ নিয়ে বঞ্চনার অভিযোগে দুমাসের বেশি সময় ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন সরকারি কর্মীদের একাংশ। তাঁদেরও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। 'আমি সব ডিপার্টমেন্টকে বলেছি, সব ফাইল খুঁজে বের করুন, খুঁজতে খুঁজতে দেখছেন তো কত বেরচ্ছে... টাকা নিচ্ছে, পেনশন নিচ্ছে, আরও চাই!... সব চাকরি চিরকুটে হয়েছে। সব ফাইল খুঁজে বার করতে বলেছি। যাঁরা আন্দোলনে বসেছেন তাঁদের বেশিরভাগের চিরকুটে চাকরি'। এছাড়া মোদি সরকারের বিরুদ্ধে এবার দিল্লি চলোর ডাক দিলেন তৃণমূল নেত্রী। দিল্লিতে অমিত শাহর পুলিশ আছে, পাল্টা হুঁশিয়ারি দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। বিরোধীদের বিরুদ্ধে ED, CBI-এর তদন্তের প্রসঙ্গ টেনে ফের বিরোধী দলগুলিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।


২০০৬ সালে গাঁধী মূর্তির নিচে টানা ২৬ দিন অনশন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেও প্রতিবাদের হাতিয়ার করেন সুরকে। রেড রোডে ৩০ ঘণ্টার ধর্নাতেও দেখা গেল সেই ছায়া।