সন্দীপ সরকার, দীপক ঘোষ ও কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা: শিক্ষক নিয়োগ থেকে কয়লা এবং গরু পাচারের মতো দুর্নীতির মামলা। তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতারি থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার। গত কয়েকমাসে রাজ্যে ঘটে গেছে একের পর এক সাড়া ফেলে দেওয়া ঘটনা। এই আবহে আগামী পঞ্চায়েত ভোট শাসক থেকে বিরোধী সবপক্ষের কাছেই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। 

আগামী বছর এপ্রিল মাসেই হতে পারে পঞ্চায়েত ভোট আর এবারের পঞ্চায়েত আর পাঁচটা ভোটের চেয়ে নিঃসন্দেহে আলাদা! তার কারণ হল, এবারের ভোটের আগে এমন একাধিক ঘটনা ঘটেছে, যা আগে কোনওদিন এই বাংলার মাটিতে হয়নি। এর আগে বঙ্গবাসী রক্তাক্ষয়ী আন্দোলন দেখেছে, শিল্পের বিদায় দেখেছে, পালাবদল দেখেছে, ভোটের নামে যুদ্ধ দেখেছে, এমনকি সারদা-নারদের মতো কেলেঙ্কারিও দেখেছে,  কিন্তু যা দেখেনি তা হল, কোটি কোটি নগদ টাকা উদ্ধার! টাকার পাহাড়ের খোঁজ, সোনা গয়নার হদিশ, গত এক বছরের মধ্যেই সামনে এসেছে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ! যে মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। অর্পিতার দু’টি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছে নগদ ৫০ কোটি টাকার নোটের পাহাড় এবং সেই সঙ্গে আরও প্রায় ৫ কোটি টাকার গয়না। 

ইডি ও সিবিআই সূত্রে দাবি করা হয়েছে, তদন্তে  তাঁদের আরও কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। এই মামলাতেই গ্রেফতার হয়েছেন SSC’র প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রাক্তন সচিব থেকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি অন্যদিকে, আবার টেট-দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য। একদিকে চাকরি বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তৃণমূলের নেতা থেকে শিক্ষাজগতের দণ্ডমুণ্ডের কর্তারা যখন জেলে, তখন যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও রাস্তায় বসে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী। 

শুধু অবশ্য নিয়োগ-দুর্নীতির মামলাই নয়, গরু পাচার মামলাতেও, গ্রেফতার হয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। কয়লা পাচার মামলায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই ও ইডি। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটককে। তাঁর বাড়িতে তল্লাশিও চালানো হয়েছে। আর এসব ঘটনার পর পঞ্চায়েত ভোটই হচ্ছে বাংলার বুকে সবচেয়ে বড় নির্বাচন। আর তাই এই নির্বাচন তৃণমূলের কাছে আধিপত্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে যেমন বড় চ্যালেঞ্জ তেমনই বিরোধীদের কাছে চ্যালেঞ্জ হল, এই ইস্যগুলিকে মানুষের কাছে যথাযথভাবে নিয়ে যাওয়া তৃণমূল কি এই রাজনৈতিক প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও জনভিত্তি ধরে রাখতে পারবে, না কি বিরোধীরা সক্ষম হবে তৃণমূলের দুর্গে হানা দিতে? উত্তর মিলবে আগামী দিনেই।