প্রকাশ সিনহা, কলকাতা:  কয়লাকাণ্ডে ধৃত  (Coal Scam Case) সাত ECL আধিকারিককে ১৪ দিনের সিবিআই (CBI) হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত। আর তাতেই সামনে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। CBI-এর দাবি, ECL আধিকারিকদের দেওয়া ঘুষের হিসেবপত্র সাঙ্কেতিক ভাষায় লিখে রাখতেন কয়লাপাচারকাণ্ডের মূল চক্রী অনুপ মাজি ওরফে লালা।


কয়লাকাণ্ডে নজরে লালার ডায়েরি


CBI সূত্রে দাবি, ECL-এর ধৃত আধিকারিকদের দেড় বছরে যে কয়েক কোটি টাকার ঘুষ দিয়েছিলেন, পুরোটাই কোড ল্যাঙ্গুয়েজে লেখা ছিল লালার ডায়েরিতে।  ডায়েরির কোনও পাতায় ২০০৯ সালে টাকা দেওয়ার কথা লেখা রয়েছে। অথচ ২০০৯ সালে এই কারবারেই যুক্তই ছিলেন না লালা। সব খতিয়ে দেখে বিশেষজ্ঞদের দাবি, এক্ষেত্রে বিভ্রান্ত করার জন্য, সম্ভবত, ২০১৯’কে ২০০৯ লেখা হয়। 


ডায়েরিতে কোথাও কোথাও আবার টাকার অঙ্কের ক্ষেত্রে শূন্যর বদলে বিন্দু ব্যবহার করা হয়েছে। এই সাঙ্কেতিক ভাষার মর্মার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করছেন বিশেষজ্ঞরা। লালার অফিসের সমস্ত নথি খতিয়ে দেখা হয়েছে। সাঙ্কেতিক ভাষার অর্থ উদ্ধার করতে টেকনিক্যাল এক্সপার্টও ডাকা হয়। সব মিলিয়ে ১০ কোটি টাকা ঘুষ দেওয়া হয়েছিল বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। 


আরও পড়ুন: Mamata Banerjee Security: গৌরী লঙ্কেশ হত্যাকে পাথেয় করেই এগোচ্ছে পুলিশ, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে অনুপ্রবেশের তদন্ত ‘গেট প্যাটার্ন’ পদ্ধতিতে


সোমবার আসানসোলে CBI-এর বিশেষ আদালতে তোলা হয় কয়লাকাণ্ডে ধৃত সাত ECL আধিকারিককে।  তাঁদের মধ্যে একজনের আইনজীবী দাবি করেন যে, কয়লাকাণ্ডে পুলিশকে একাধিকবার অভিযোগ জানানো হয়। কিন্তু তাসত্ত্বেও প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। 


ECL-এর তো নিজেদের ভিজিল্যান্স ডিপার্টমেন্ট রয়েছে। তারা এতদিন কী করছিল, উঠে আসে সেই প্রশ্নও। পাল্টা CBI-এর আইনজীবী জানান, পুরোটাই লোক দেখানো। দাবি আর বাস্তবচিত্রের মধ্যে অনেক ফারাক রয়েছে।


এরপর, অভিযুক্তদের আইনজীবী প্রশ্ন করেন, কয়লাকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত রাজা কর কোথায়? তিনি তো সবথেকে বড় কিংপিন। তাঁকে কেন ছাড়া হচ্ছে? শুধুমাত্র ধৃত ECL কর্তাদের কেন বলির পাঁঠা করা হচ্ছে? জবাবে CBI’এর আইনজীবী জানান, কাউকে ছাড়া হয়নি। তদন্তে যাঁদের যাঁদের প্রয়োজন, প্রত্যেককেই ডাকা হবে। 


১০ কোটি টাকা ঘুষ দেওয়া হয়!


ধৃত ECL আধিকারিক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের আইনজীবী বলেন,"আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে কখনও ৫৬ লক্ষ, কখনও ২০ লক্ষ, কখনও আবার ৩৮ লক্ষ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তিনি তো আত্মীয়ের থেকে ১০ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছেন!" প্রমাণ স্বরূপ একটি সাদা কাগজে লেখা বয়ানও দাখিল করেন আইনজীবী। তাতে বিচারক বলেন, ‘‘১০ লক্ষ টাকা নেওয়ার কথা সাদা কাগজের বয়ানে উল্লেখ করা হয়েছে? কী করে এটা জাস্টিফাই করবেন?’’



এর পর সিবিআই জানায়, অভিযুক্তদের যদি ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে তো তদন্ত তুলে নিতে হবে! এই মামলায় জেলে গিয়ে প্রশ্ন করতে চায় CBI। তাতে গোয়েন্দাদের কাছে আদালত জানতে চায় এ পর্যন্ত তদন্তের কী অগ্রগতি হয়েছে। তাতে CBI-এর তরফে বিচারকের হাতে কেস ডায়েরি তুলে দেওয়া হয়। সব খতিয়ে দেখে, ধৃত সাত ইসিএল আধিকারিকক ১৪ দিনের CBI হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত।