কলকাতা : অধীর চৌধুরীর আরজি কর মেডিক্যালে ঢোকায় আপত্তি। 'রাজনৈতিক ব্যক্তিদের এখন ভিতরে যাওয়ার অনুমতি নেই।' এই কথা বলে আপত্তি জানালেন গেটে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ। আপত্তিতে আরজি করা হাসপাতালের ভিতরে গেলেন না অধীর চৌধুরী। এরপর অধীরের সঙ্গে দেখা করতে আসেন আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের তরফে এক প্রতিনিধি। তিনি অধীর চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলেন। কংগ্রেস নেতা জানতে চান, 'যাঁরা ধর্না চালিয়ে যাচ্ছেন বা আন্দোলন করছেন তাঁদের কি জল দিতে পারি ?' এ প্রশ্নের উত্তরে আন্দোলনকারী ডাক্তার বলেন, 'স্যার আমাদের অলরেডি ফান্ড আছে।' এরপর আর কথা না বাড়িয়ে সেখান থেকে সরে আসেন অধীর।
পরে সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, "আমি রাজনীতি করি ঠিক। আমি কংগ্রেস দল করি এটাও ঠিক। কিন্তু, মানুষ হিসাবে আমার একটা পরিচয় আছে। আমাদের দেশে এমন হয়নি যে, একজন ব্যক্তির পরিচয় শুধু রাজনৈতিক। এরকম কোনও ব্যাপার আমার জানা নেই। আমরা যে মন্দিরে যাই, সেখানে তো কংগ্রেসের ভক্ত হিসাবে যাই না। মসজিদে যাই, কংগ্রেসের ভক্ত হিসাবে যাই না। বিষয়টা হচ্ছে, যখন দেখছি আমাদের ঘরের ডাক্তাররা আন্দোলন করছেন, আমার মনে হলে একবার গিয়ে তাঁদের ভাবনার সঙ্গে যে আমরা আছি, তাঁদের ভাবনার সঙ্গে আমাদের ঐক্য স্থাপনের জন্য একবার দেখা করতে চেয়েছিলাম। একাই। এইজন্য দেখা করতে চেয়েছিলাম, যে তাঁদের সমর্থন করতাম। বলতাম, ভাই আপনারা যেটা করছেন তার জন্য আমরা গর্বিত। সঙ্গে আছি।"
অধীর আরও বলেন, "আমি তাঁদের (নির্যাতিতার) বাড়িও গিয়েছিলাম একটু আগে। অনেকক্ষণ পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। সেখানে পরিবারকে বাইরে বেরোতে দেওয়া হচ্ছে না। নানাবাহানায় পরিবারকে গৃবহন্দী করে রাখা হয়েছে পানিহাটিতে। পানিহাটিতে তাঁদের পরিবারকে পুলিশ গৃহবন্দী করে রেখেছে। তাঁদের বাইরে বেরোতেও দিচ্ছে না। এখানে অদ্ভুত ধরনের ব্যারিকেড করে রেখেছে পুলিশ। CISF কিছু জানে না। তাদের দোষ দিতে রাজি নই। তারা তো ভিতরের নিরাপত্তা দেখবে। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ বাহিনীর তৎপরতা দেখে অবাক হলাম। কারণ, একজন ব্যক্তি হিসাবে একা তাঁদের (জুনিয়র চিকিৎসক) সঙ্গে দেখা করে তাঁদের ভাবনার সঙ্গে সহমত পোষণ করতে চেয়েছিলাম। তাঁদের জল অফার করতাম। ঠিক আছে, তাঁদের মধ্যে একজন এসে বললেন আমাদের দরকার নেই। কোনও অসুবিধা নেই আমার। তাঁদের তো জানালাম, কম সে কম আমি এসেছি। এটুকুই আমার কাছে যথেষ্ট।"
তাঁর সংযোজন, "সমস্যা হচ্ছে, 'বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো'। এখানে তাই দেখছি। সবকিছু ঘটনা ঘটে গেছে। যে অপরাধ হওয়ার হয়ে গেছে। তথ্যপ্রমাণ লুঠ হয়ে গেল। ঘরের মেয়ে মারা গেল। ধর্ষিতা হল। গোটা পরিবার বিচার চাইছে। সারা বাংলা, দেশ বিচার চাইছে। তখন পুলিশের কোনও হেলদোল ছিল না, নড়াচড়া ছিল না। জানেন, এখান থেকে যাতে ডেডবডি না নিয়ে যাওয়া হয় তারজন্য কলকাতা পুলিশ সরকারি নির্দেশে সেই পরিবারকে পিছন পিছন যেতে দেয়নি সেদিন। তাঁদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে দেড় ঘণ্টা সেই ডেডবডিকে ফেলে রেখেছিল। তারপর পুলিশ সেখানে টাকা অফার করেছিল। মুখ্যমন্ত্রী তো পরে গেছেন। পুলিশ তাঁর (নির্যাতিতা) বাবাকে ডেকে বলছেন, টাকা নিন। যা করছি, করতে দিন। এখনই পোড়াতে হবে। দেরি করা যাবে না। গোটা তথ্যপ্রমাণ লোপাটের জন্য এই পুলিশের তৎপরতা, সেদিন যদি আমাদের ঘরের মেয়ের পক্ষে থাকত, তাহলে আজ কোনও অপরাধী মুক্তি পেত না।"