উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, সমীরণ পাল ও রঞ্জিত হালদার, কলকাতা : পঞ্চায়েত ভোট (Panchayat Election) ঘিরে নাগাড়ে হিংসার প্রসঙ্গ তুলে এর আগেও মুখ্যমন্ত্রীকে বিঁধেছেন তিনি। একাধিকবার শাসকদলকে একহাত নিয়েছেন। আর এবার ভোট সন্ত্রাস নিয়ে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) কড়া চিঠি দিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী (Adhir Chowdhury)। বোর্ড গঠনের আগে বিরোধী দলের জয়ী প্রার্থীদের ভয় দেখানো ও অপরহণের অভিযোগ তুললেন তিনি। পাল্টা খোঁচা দিয়েছে রাজ্যের শাসকদলও। এই আবহে দিল্লিতে তৃণমূল ও কংগ্রেসের একজোট হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে আক্রমণ করতে ছাড়েনি গেরুয়া শিবির।  


পরের বছর লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি-বিরোধী শক্তি এককাট্টা হচ্ছে। দুই দফায় বৈঠকের পর অনেকটাই কাছাকাছি INDIA-র ছাতার তলায় আসা দলগুলি। তৃতীয় দফার বৈঠকও খুব শীঘ্রই আয়োজিত হতে চলেছে। বেঙ্গালুরুতে দ্বিতীয় দফার বৈঠকে সনিয়া ও রাহুলের মাঝে বসে বৈঠকে সামিল থাকতে দেখা গেছে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। একমঞ্চে থেকেছে সিপিএমও। যদিও তার পরও এরাজ্যের কংগ্রেস ও সিপিএমের একাধিক নেতা বুঝিয়ে দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধিতা জারি থাকবে। তার পরও মণিপুরে INDIA-র তরফে যে প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়েছিল তাতে কংগ্রেস-তৃণমূল উভয় দলের প্রতিনিধি থেকেছে। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সমীকরণ কোন দিকে এগোচ্ছে তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে কৌতূহল রয়েছেই।


কিন্তু, জাতীয় মঞ্চে বিজেপি বিরোধিতায় একজোট হলেও, বাংলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে কার্যত 'কড়া' অবস্থানই বজায় রাখছে প্রদেশ কংগ্রেস। দিল্লিতে 'দোস্তি' আর বাংলায় 'কুস্তি'-র ফর্মুলা মেনে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটে সন্ত্রাস ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রীকে কড়া চিঠি লিখলেন অধীর চৌধুরী। ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের আগে, বিরোধী দলের জয়ী প্রার্থীদের ভয় দেখানো এবং অপহরণের মতো ঘটনা বন্ধ করতে অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবি জানালেন তিনি। চিঠিতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অভিযোগ করেছেন, পঞ্চায়েত ভোটে এত সন্ত্রাস সত্ত্বেও যেখানে যেখানে কংগ্রেসের প্রার্থীরা জিতেছেন, তাঁদের তৃণমূলে টানতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ, রাজনৈতিক নেতা থেকে গুন্ডা, দল বদলানোর জন্য খুনের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে তাঁদের। পশ্চিমবঙ্গে এটা কি নির্বাচনে জেতার কোনও সভ্য উপায় ? কড়া ভাষায় লেখা এই চিঠিতে এই প্রশ্নও তুলেছেন অধীর চৌধুরী। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী যাতে ব্যক্তিগতভাবে এই বিষয়গুলি দেখেন, তার জন্যও আবেদন জানিয়েছেন অধীর চৌধুরী। 


মোদি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের দুই শরিকের মধ্যে এহেন টানাপোড়েনের আবহে তীব্র কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, 'আমরা আগেও বলেছি অধীর চৌধুরী রাইট পার্সন ইন এ রং টিম। চিঠি লেখার কী দরকার ছিল, দিল্লিতে দেখা হল ভিক্ট্রি সাইন দেখালেন তখনই তো কানে কানে বলতে পারতেন।'


প্রসঙ্গত, জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেস-তৃণমূল সৌজন্যতা বজায় রেখেই চলেছে। তাই তো দিন দু'য়েক আগে 'মোদি পদবি' বিতর্ক মামলায় রাহুল গাঁধীর সাজায় সু্প্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ দেওয়ায়, রাহুলের সাংসদ পদ ফিরে পাওয়া নিয়ে সেদিনই ট্যুইটে শুভেচ্ছা জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। আর রবিবার মুখ্যমন্ত্রীকে যখন কড়া চিঠি দিলেন কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরী, আবার সেদিনই রাহুলকে অবিলম্বে সংসদে ফেরানোর দাবিতে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র।