সন্দীপ সমাদ্দার, অর্ণব মুখোপাধ্যায় ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, ঝালদা : পুরুলিয়ায় ঝালদায় (Jhalda) কংগ্রেস কাউন্সিলরদের দলবদলের নেপথ্যে কি চাপের রাজনীতি ? এই বিতর্কের মধ্যেই দলবদলকারীদের সঙ্গে বাঘমুণ্ডির তৃণমূল বিধায়ক ও পুলিশ সুপারের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করলেন কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচী (Kaustav Bagchi)। এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার। চাপের কোনও বিষয় নেই বলে দাবি করেছেন বাঘমুণ্ডির তৃণমূল বিধায়কও।


জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপিকে হটাতে যখন কংগ্রেস ও তৃণমূল হাতে হাত ধরার কথা বলছে, I.N.D.I.A নামের জোটকে কংক্রিট করার কথা বলছে, তখন এই বাংলায়, কংগ্রেসেরই হাত ভেঙেই ১২ আসনের ঝালদা পুরসভা কেড়ে নিয়েছে তৃণমূল ! এই প্রেক্ষাপটেই তৃণমূলের সঙ্গে জোটের কট্টর বিরোধিতা করা প্রদেশ কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচীর ফেসবুক প্রোফাইলে পোস্ট করা দুটি ছবিকে কেন্দ্র করে রীতিমতো বিতর্কের ঝড় উঠেছে।

কৌস্তভ বাগচীর পোস্ট করা ছবিতে যেখানে কংগ্রেসত্যাগী কাউন্সিলরদের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার ও বাঘমুণ্ডির তৃণমূল বিধায়ককে। এই ছবির সঙ্গে কৌস্তভ লিখেছেন, অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করছেন, তৃণমূল ঝালদা পুরসভা দখল করল কী ভাবে ! আজ আমি না, ছবিই কথা বলুক। এসপি পুরুলিয়া, কংগ্রেস কাউন্সিলর মিঠুন কান্দু ও বিজয় কান্দু, নির্দল কাউন্সিলর সোমনাথ কর্মকার ও বাঘমুণ্ডির তৃণমূল বিধায়ক সুশান্ত মাহাতো - All in one frame।


প্রদেশ কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচী বলছেন, "আমরা তো বারবার বলছি, জোরপূর্বক এই বিষয়টি হয়েছে। তাঁদের উপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। এসপি তাঁর নিজের বাংলোতে তৃণমূলের বাঘমুণ্ডির যে বিধায়ক সুশান্ত মাহাতোর উপস্থিতিতে এই তিন কাউন্সিলর, আর এক নির্দল কাউন্সিলর সোমনাথ কর্মকার। আমাদের দাবিগুলোই পরিষ্কার হয়।"


যদিও ঝালদার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেসত্যাগী কাউন্সিলর সোমনাথ কর্মকার বলছেন, "চাপের কোনও বিষয় নয়। আমরা তো এমনিতে ঝালদার বিষয়ে এসপি সাহেবের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম। ঝালদাকে কীভাবে যানজটমুক্ত করা যায়। চাপের কোনও বিষয় নেই। এখানে যাঁরা যোগদান করেছেন, তাঁর স্ব-ইচ্ছায় যোগদান করেছেন।"

১৩ মার্চ, ২০২২। পুরুলিয়ার ঝালদায় ত্রিশঙ্কু পুরবোর্ড কারা গঠন করবে তা নিয়ে চাপানউতোরের মধ্যেই খুন হন কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু। তাঁকে তৃণমূলে যোগ দিতে চাপ সৃষ্টির অভিযোগে নাম জড়ায় ঝালদা থানার IC সঞ্জীব ঘোষের। সেই সময় যাঁরা এই অভিযোগ তুলেছিলেন, সেই মিঠুন কান্দু-সহ কংগ্রেসের ৪ কাউন্সিলরই দলবদলে চলে গিয়েছেন তৃণমূলে !

কৌস্তভ বাগচীর পোস্ট করা ছবিতে, পুলিশ সুপারের সঙ্গে সেই মিঠুনকেও দেখা যাচ্ছে। এপ্রসঙ্গে পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেসের সভাপতি নেপাল মাহাতো বলেন, "এটা দেখার কী আছে। হয়তো তাঁরা তৃণমূলে যোগদান করার পরে বিধায়ক এসপি সাহেবের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন পরিচিত করাতে। এনিয়ে আমার কোনও মন্তব্য নেই। ফেসবুকের ছবি নিয়ে খুব একটা গুরুত্ব দিতে চাই না। তবে, এই যোগদানের পেছনে যে পুলিশের মদত আছে সেটা সবাই জানে।" 


সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলছেন, "পুলিশ প্রশাসনের একটা অংশ তারা যেমন লুঠের রাজত্ব চালাতে সাহায্য করছে, ভাগ পাচ্ছে, তেমনই ভোট লুঠে এবং গণনা লুঠে সাহায্য করেছে। এখন পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন হোক বা ঝালদা পুরসভা গঠন হোক, সেখানে এসপি-কে, আইসি-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁরা প্রতিদিন এই কাজই করছেন। একটা ছবি বাইরে বেরিয়ে এসেছে। রাজ্যজুড়ে এই ছবি স্পষ্ট।"

এ নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে কোনও মন্তব্য করতে চাননি পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়েছে, সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনার কিনারা হওয়ার পরে, গত মঙ্গলবার বাঘমুণ্ডির বিধায়কের সঙ্গে কয়েকজন এসেছিলেন পুলিশ সুপারকে অভিনন্দন জানাতে। এটা সেই সময়ের ছবি। পুলিশ সুপারকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি ঝালদা শহরকে যানজট মুক্ত করা নিয়েও সেদিন বিধায়ক ও তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে পুলিশ সুপারের কথা হয়। বাঘমুণ্ডির তৃণমূল বিধায়কেরও দাবি, "সম্প্রতি ডাকাতির ঘটনায় ধরা পড়েছে তাড়াতাড়ি। সেটার জন্য তাঁকে অভিনন্দন জানাতে গিয়েছিলাম। জয়েনিং তো আগে হয়েছে। ৬ তারিখে।"


তবে শুধু পুলিশ সুপারের সঙ্গেই নয়। কৌস্তভ বাগচী অফিসিয়াল - নামের ফেসবুক পেজে পোস্ট করা অন্য ছবিতে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে ঝালদার চেয়ারপার্সন শীলা চট্টোপাধ্যায়-সহ দলবদলকারী কাউন্সিলরদের হাসিমুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। সেই ছবিতে তীক্ষ্ণ কটাক্ষ করে লেখা হয়েছে - এই রাজ্যের I.N.D.I.A জোট। ফিরহাদ হাকিম অবশ্য বলছেন, "খুব ছোট পুরসভা। ওয়াটার সাপ্লাই নিয়ে সমস্যা। ওটার টেন্ডার ডেকেছি। রাজনৈতিকভাবে কেউ এল, কেউ গেল। এটা এত ছোট পুরসভা যে সেটা নিয়ে কিছু যায় আসে না। কোনও দলেরই যায় আসে না। আমাদের দলের যায় আসে না। কিন্তু, কাজটা করতে হবে। বিধায়ক এসেছিলেন। তাঁর মূল দাবি, তাঁর এলাকায় কাজটা করতে হবে।"

এদিকে, দলবদল এবং এই সমস্ত ছবির বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি নিহত তপন কান্দুর স্ত্রী ও কাউন্সিলর পূর্ণিমা কান্দু।