ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, কলকাতা: বকেয়া DA-র দাবিতে শহিদ মিনারে রাজ্য সরকারি কর্মীদের (State Government Employee) ধর্না-অবস্থান ৮ দিনে পড়ল। এর আগে ১ ফেব্রুয়ারি ২ ঘণ্টার কর্মবিরতির ডাক দেয় সরকারি কর্মী এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের ২৮টি সংগঠনের যৌথ মঞ্চ। বকেয়া DA-র দাবিতে এবার আন্দোলনের ঝাঁঝ আরও বাড়াতে চাইছেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা। আজ বিকেলে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ।
এর আগে শহিদ মিনারে রাজ্য সরকারি কর্মীদের অবস্থানে বিক্ষোভ ৬ দিনে রাজ্যের সমস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানে ২ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা। সরকারি কর্মী এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের ২৮টি সংগঠনের যৌথ মঞ্চের ডাকে এদিন সরকারি প্রতিষ্ঠানের বাইরে বিক্ষোভ দেখানোরও পরিকল্পনা ছিল। দুপুর ২টো থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করা হবে বলে জানানো হয়েছিল তাঁদের তরফে।
ডিএ-র (DA) দাবিতে বিধানসভা অভিযান। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের (State Government Employees) সংগঠনের যৌথ মঞ্চের মিছিল ঘিরে ধুন্ধুমার। ধর্মতলা (Esplanade) থেকে মিছিল যাচ্ছে বিধানসভার দিকে। বিধানসভার সামনে পুলিশি ধরপাকড় চলে। পুলিশি বর্বরতার অভিযোগ তোলেন আন্দোলনকারীরা। বুধবার ১৪৪ ধারা এলাকায় মিছিল পৌঁছতেই শুরু হয় ঝামেলা। পুলিশ এবং কর্মীদের মধ্যে ধস্তাধস্তি বাধে। অভিযোগ, টেনে হিঁচড়ে সরিয়ে দেওয়া হয় আন্দোলনকারীদের।
বাড়ছে ডিএ ফারাক
পঞ্চম বেতন কমিশন অনুযায়ী, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের DA-র ফারাক ছিল ৩৪ শতাংশ। ষষ্ঠ বেতন কমিশন অনুযায়ী সেই ব্যবধান বেড়ে হয় ৩৫ শতাংশ। পঞ্চম বেতন কমিশন অনুযায়ী যে ৩৪ শতাংশ DA-র ফারাক ছিল, তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলায় গত ২০ মে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, ৩ মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া DA মেটাতে হবে। রাজ্য সরকার রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানালেও ২২ সেপ্টেম্বর তা খারিজ করে দেয় আদালত।
বারবার ধাক্কা, এবার সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য
হাইকোর্টের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই ৪ নভেম্বর, সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে রাজ্য সরকার। অন্যদিকে, বকেয়া DA নিয়ে রাজ্য সরকার আদালতের নির্দেশ মানেনি, এই অভিযোগে রাজ্যের মুখ্যসচিবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলায় আদালতকে হলফনামা দিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার জানিয়েছে, ২০০৯ সালের রোপা অনুযায়ী, সরকারি কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত DA দেওয়া রাজ্য সরকারের আর্থিক সামর্থ্যের বাইরেই শুধু নয়, অতিরিক্ত DA দিতে গেলে রাজ্যের অর্থনীতিতে বিপর্যয়মূলক প্রভাব পড়বে। এই প্রেক্ষিতে সরকারি কর্মীদের বাড়তি DA দিতে গেলে, রাজ্যের আর্থিক কর্মকাণ্ডের ওপর অপ্রত্যাশিত প্রভাব পড়বে এবং অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে। এর সঙ্গে রাজ্য সরকার যে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে, তাও উল্লেখ করা হয়েছে হলফনামায়।
অন্যদিকে, উল্লেখ্য, আজ শুক্রবার, কলকাতার সমস্ত ক্যাম্পাসে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সংগঠন। কর্মরত অবস্থায় মৃতদের পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়ার প্রক্রিয়া ফের চালু করার দাবিতে আজ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী সংগঠন। কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসের গেটে পিকেটিং চলছে। পড়ুয়া ও শিক্ষকদের কাছে ক্লাসে যোগ না দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন ধর্মঘটীরা। যদিও কাউকে জোর করা হচ্ছে না বলে তাঁদের দাবি। ধর্মঘটীদের দাবি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় মৃত কর্মীদের পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়ার প্রক্রিয়া ২০১২ পর্যন্ত স্বাভাবিক থাকলেও গত কয়েকবছর ধরে বন্ধ। লাগাতার আন্দোলনের পরেও কর্তৃপক্ষ ও সরকারের টনক নড়েনি বলে অভিযোগ। তার প্রতিবাদেই আজ সমস্ত ক্যাম্পাসে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন।