কলকাতা: রাজভবনের নতুন বিজ্ঞপ্তি ঘিরে বিতর্ক। আরও জোড়াল হল রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে,'আচার্যের পর উপাচার্যই সব, সরকারকে মানতে বাধ্য নয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। আধিকারিকদের সরকারি নির্দেশ মেনে চলার পরিবর্তে উপাচার্যর নির্দেশ মানতে হবে। উপাচার্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কর্তা, তাঁর নির্দেশ মেনে চলতে হবে সহ উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে।'


রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির রাশ কার হাতে থাকবে? তা নিয়ে রাজভবন-নবান্ন টানাপোড়েন চলছিলই। এবার তা নতুন মাত্রা পেল রাজভবনের জারি করা বিজ্ঞপ্তিকে ঘিরে। যাতে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় আচার্যের পর উপাচার্যই সব। তাঁর মান্যতা ছাড়া রাজ্য সরকারের নির্দেশ মানতে বাধ্য নন বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকরা। শনিবার রাজ্যপালের সিনিয়র স্পেশাল সেক্রেটারির সই করা এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, উপাচার্যরাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির প্রিন্সিপাল এগজিকিউটিভ অফিসার। তাঁদের নির্দেশানুসারেই বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় কাজকর্ম পরিচালিত হবে। রেজিস্ট্রার-সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকরা, উপাচার্যর নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করবেন। উপাচার্যর সম্মতি ছাড়া, সরাসরি রাজ্য সরকারের কোনও নির্দেশ মানতে বা কার্যকর করতে তাঁরা বাধ্য নন।


আচার্য ও রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস বলেন, “গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে বিভ্রান্তি মেটানোর জন্য। স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, রাজ্য সরকারের উচিত, বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্বায়ত্বশাসনের ক্ষমতা বজায় রাখা। এটা আচার্যের তরফে জারি করা কোনও নির্দেশিকা নয়। যা করা হয়েছে, পুরোটাই সংবিধান, UGC-র আইন এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা মেনে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালগুলির স্বশাসনের ক্ষমতাকে সবার স্বাগত জানানো উচিত।’’

সম্প্রতি, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো, উচ্চশিক্ষা দফতর, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে, ঝাড়গ্রামের সাধু রামচাঁদ মুর্মু বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হিসাবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়েছে। রাজভবনের বিজ্ঞপ্তিতে সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলা হয়েছে, উচ্চশিক্ষা দফতরের প্রধান সচিবের এই ধরনের বদলির নির্দেশ দেওয়ার কোনও ক্ষমতা নেই। এই প্রসঙ্গে ১৯৯৪ সালের উমাপতি চৌধুরী বনাম বিহার সরকারের একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায়ের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। অনেকেরই মতে, রাজভবনের এই উদ্যোগ আসলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে, রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার প্রচেষ্টা মাত্র। আর এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে দানা বেধেছে জোর বিতর্ক।

পদাধিকার বলে রাজ্যপালই রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য। তাঁর সঙ্গে শিক্ষাক্ষেত্রের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রাজ্য সরকারের টানাপোড়েন লাগাতার চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আর্থিক বিষয় সম্পর্কে উপাচার্যদের নিয়মিত রিপোর্ট চেয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজভবন। দ্বন্দ্বের আবহে, মুখ্যমন্ত্রীকে, আচার্য করতে বিধানসভায় বিল পাস করায় রাজ্য সরকার। সম্প্রতি, আচার্য-রাজ্যপাল বোস, ৮টি বিশ্ববিদ্য়ালয়ে নতুন অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ করেন। ৩ জন উপাচার্যের মেয়াদ বৃদ্ধির নির্দেশ দেন। উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে দ্বন্দ্বের জল গড়ায় আদালত পর্যন্ত। যার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট তার পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করে,

গত শুক্রবার রাজ্যপাল বিবৃতি দিয়ে বলেন, উপাচার্যহীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এবার আচার্যই, উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করবেন। শনিবারের বিজ্ঞপ্তির প্রসঙ্গে নারী ও শিশুকল্যাণমন্ত্রী ও তৃণমূল বিধায়ক শশী পাঁজা বলেন, “দিদি ২৮ অগাস্টও বললেন, যে মাননীয় রাজ্যপাল ভুলে যাচ্ছেন যে তিনি মনোনীত, আমরা নির্বাচিত। দিদি যেটা বারবার বলছেন, যে একটা প্যারালাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। কোথাও না কোথাও বেঙ্গলি ইন্টেলেজেন্সিয়াকে আমার মনে হয়, আক্রমণ করা হচ্ছে। না হলে আপনি ভাবুন, শিক্ষা নিয়ে এতটা বিব্রত করা, ঠিক নয়।’’


আরও পড়ুন: Kolkata News: 'আমাকে ক্ষমা করে দাও' মৃত্যুর আগে স্ত্রীকে মেসেজ মৃত চন্দন মণ্ডলের


Education Loan Information:

Calculate Education Loan EMI