সন্দীপ সরকার, সৌমিত্র রায়, কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা: গ্রেফতারির আগেও দাপট। গ্রেফতারির পরেও অকুতোভয়! পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন ঠিকই। কিন্তু সন্দেশখালির সম্রাট শেখ শাহজাহানের মেজাজের যেন কোনও পরিবর্তন হয়নি! আদালত চত্বরে পুলিশকে পিছনে ফেলে যেভাবে গটগটিয়ে হেঁটে গেলেন, শেখ শাহজাহানের সেই শরীরী ভাষায় তৈরি হল নতুন বিতর্ক।


এর আগে সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে গ্রেফতার করার সময় পুলিশকে দেখা গিয়েছে মারমুখী মেজাজে টেনে নিয়ে যেতে। আবার কয়েকদিন আগে সন্দেশখালি থেকে সংবাদ পরিবেশনের সময় টেনেহিঁচড়ে গ্রেফতার করা হয়েছিল সাংবাদিক সন্তু পানকে। কিন্তু এদিন শাহজাহানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের সেই মেজাজ উধাও। বরং শরীরী মেজাজে বেপরোয়াভাব দেখালেন খোদ শাহজাহান। সাদা রঙের কুর্তা পরে শেখ শাহজাহান যাচ্ছিলেন, তখন তাঁকে একাধিক প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি শুধুমাত্র আঙুল নাড়িয়ে না-এর একটা ইঙ্গিত দিয়ে চলে যান।


প্রায় দুই মাস পরে অবশেষে পুলিশ ধরল শাহজাহানকে। কিন্তু ধরা পড়ার পরও তাঁর শরীরি ভাষা নতুন বিতর্কের জন্ম দিল। গ্রেফতারের পরও তাঁর হাঁটাচলার মধ্য়ে ঔদ্ধত্য আর স্পর্ধার প্রতিফলন দেখছে বিরোধীরা। এদিন দেখা গেল আগে আগে গেল শেখ শাহজাহান। পিছে পিছে গেল পুলিশ।


ভুরি ভুরি অভিযোগ:
রেশন সামগ্রী বণ্টনে দুর্নীতি থেকে শুরু করে, শ্লীলতাহানি, অবৈধভাবে জমি দখল, ভেড়ি বানানো সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে। গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁর শরীরী ভাষা নিয়ে রাজ্য-রাজনীতি তোলপাড়। মুখ খুলেছেন বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র সুধাংশু ত্রিবেদী। তাঁর তোপ, 'যে রকম শারীরিক অঙ্গভঙ্গি ছিল শেখ শাহজাহানের, তা কোনও অপরাধীর হতে পারে?দেখে অভিনেতা মনে হচ্ছিল। যে স্টাইল নিয়ে ও চলছিল এবং যেভাবে পুলিশ প্রশাসন ওর পিছনে পিছনে চলছিল। কোথাও মনে  হচ্ছিল না বিন্দুমাত্র ভয় রয়েছে ওর মধ্য়ে।' রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, 'আপনারা যদি আজ শেখ শাহজাহানের কোর্টে ঢোকার ভিডিয়ো দ্যাখেন, তাহলে দেখে মনে হবে, শেখ শাহজাহান মাথা উঁচু করে গটগট করে হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছে! আর পেছনে পুলিশগুলো মাথা নীচু করে হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছে! দেখে মনে হচ্ছে, পুলিশ শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে না, শেখ শাহজাহান পুলিশকে অদৃশ্য দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে।'সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, 'শুধু এখন মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য, নিরাপদ সর্দারকে ঠেলেঠুলে ধাক্কা দিয়ে তুলেছে, তোমরা জানো। আর যে শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে মানুষের এত ক্ষোভ উগরে দিচ্ছে, তাকে পুলিশ বঙ্গরত্ন সম্মান দেওয়ার মতো করে নিয়ে গিয়েছে। এবং তাঁর হাঁটার ভঙ্গি, শুভেন্দুর হাঁটার ভঙ্গি আর ওর (শেখ শাহজাহান) হাঁটার ভঙ্গি একই। ও (শুভেন্দু অধিকারী) কি বিরোধী নেতা নাকি সরকারি নেতা বোঝা যায় না, দূর থেকে ওরকম একটা নাদুসনুদুস গোলগাল চেহারা আছে, তৃণমূলের ১৩ বছরে যারা খেয়েছে, যেরকম চেহারা হয়েছে, তার মধ্যে ওই রকম একটা অংশ আছে।'


বিষয়টি নিয়ে পাল্টা বিজেপিকে তোপ দেগেছে তৃণমূল। তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও ব্রায়েন বলেছিলেন, 'বডি ল্য়াঙ্গোয়েজের কথা কে বলছে? বিজেপি! আপনারা ভিডিয়োগুলো দেখুন না! নীরব মোদির ভিডিয়োগুলো দেখুন না, ২০০৩ তো পার হয়ে গিয়েছে। ললিত মোদির ওখানে দেখুন না। লন্ডনে ঘুরছে। ভাল! শ্যাম্পেন খাচ্ছে। এগুলো আপনারা বডি ল্যাঙ্গোয়েজের কথা বলছেন!'


শরীরী ভাষা নিয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জয়রঞ্জন রাম বলছেন, 'এ ধরনের বডি ল্যাঙ্গোয়েজ তখনই থাকতে পারে, যখন কেউ জানে আমার এখনই কোনও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।'


আরও পড়ুন: আগামী বছর উচ্চমাধ্যমিকে কবে কোন পরীক্ষা? শুরু কখন? রইল খুঁটিনাটি