কমলকৃষ্ণ দে, শিবাশিস মৌলিক, কলকাতা ও পূর্ব বর্ধমান: ফের বিতর্কিত মন্তব্য। অভিযোগের তির শাসক দলের বিধায়কের দিকে। ঘটনাস্থল পূর্ব বর্ধমান। ভোটার লিস্টে শুধু তৃণমূল সমর্থকদেরই নাম তুলুন! বিজেপির লোকদের তুলবেন না! বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাসের এই মন্তব্য ঘিরে দানা বেঁধেছে বিতর্কের। বিরোধীদের অভিযোগ, ভোটার লিস্টকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে তৃণমূল। যদিও বিরোধীদের এই অভিযোগকে আমলই দিতে চায়নি তৃণমূল শিবির।


এর আগে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহর হুঁশিয়ারি নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্রের বক্তব্য নিয়েও জলঘোলা হয়েছে। এবার বিতর্ক শুরু আর এক তৃণমূল বিধায়ককে নিয়ে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূলের তিন বিধায়কের তিন ধরণের হুঁশিয়ারি-সতর্কবার্তা এবং ভবিষ্যদ্বাণীই। ফের একই প্রশ্ন তুলে দিল, পঞ্চায়েত ভোট কতটা শান্তিপূর্ণ হবে সেই প্রশ্ন। সব ঠিক থাকলে বছর ঘুরলেই পঞ্চায়েত ভোটের তোড়জোড় শুরু হয়ে যাবে। তারপর ২০২৪-এ লোকসভা নির্বাচন। তার আগে ভোটার লিস্টে নাম তোলার কাজ শুরু হয়েছে। আর এই প্রেক্ষাপটেই শুধু তৃণমূলের সমর্থকদেরই নাম ভোটার লিস্টে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাস। তারপরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। 


কী বলেছেন বিধায়ক:
বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাস বলেন, 'আমরা চাই, আমাদের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ভোটার লিস্ট হবে। আমরা চাই বলেই, কাল যে বিজেপির লোকগুলো এসেছে, তাঁর বাড়ির তুলে দেব, এটা কিন্তু ভুল করবেন না। ভোটার লিস্টে নামটা তাঁদেরই তুলবেন, যাঁরা আমাদের পরিবার। যাঁরা আমাদের পরিবারের দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে রয়েছেন।' তিনি আরও বলেন, 'নতুন লোক তো আসছেই। নতুন লোক মানে তো বুঝতে পারছেন, সব বাংলাদেশের লোক
 আসছে। তাঁদের ভোট আমরা বেশি তুলতে গেলে আরও ক্ষতি। কারণ তাঁরা তো বেশি হিন্দু হিন্দু করে বেশিটাই ভোট দিয়ে দেয় বিজেপিকে। তাই ভোটটা যেই তুলবেন, সে নতুন লোক আসছে, যারা আমাদের দলের সঙ্গে যুক্ত থাকবে, তাঁদেরই চেষ্টা করবেন।' এমন বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে বিরোধী দলগুলি।


মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা:
গত ১০ নভেম্বর, প্রশাসনিক সভা থেকে ভোটার লিস্টে নাম তোলা নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেদিন তিনি বলেছিলেন, 'সবাই যাঁরা ভোটার লিস্টের কাজে আছেন, আমি রিকোয়েস্ট করব সবার নামটা তুলবেন। ১৮ বছর বয়স যাদের হচ্ছে বা হতে যাচ্ছে, তাদের নামগুলো তুলবেন ইলেকশন কমিশনের নিয়ম মেনে। কারও নাম দয়া করে অন্য ধর্মের লোক বলে বাদ দেবেন না। একটা চক্রান্ত চলছে।' এবার তাঁর দলেরই এক বিধায়ক এমন মন্তব্য করায় কার্যত শোরগোল পড়েছে।


বিজেপির তোপ:
বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী ছিক না কি খোকন দাস ঠিক। অর্থাৎ কোনটা লুকনো এজেন্ডা, কোন এজেন্ডা সেটা মানুষ ঠিক করবে। তৃণমূল কংগ্রেস ভোটার লিস্টে কারচুপি করছে এবং করে চলেছে এটাই তার প্রমাণ।'


রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভোটার তালিকা তৈরি মনোনয়ন পেশ এবং তারপরে ভোট দান। নির্বাচনের এই তিন অঙ্গের মধ্যে যদি একটিও বিঘ্নিত হয়, তাহলেই কিন্তু প্রশ্ন সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট নিয়েই প্রশ্ন উঠবে।


আরও পড়ুন:  'এখানে বিজেপি প্রার্থী দিলে, শাস্তি হবে আমার নেতাদের', উদয়নের নতুন হুঁশিয়ারি