শুভেন্দু ভট্টাচার্য, কোচবিহার: কোচবিহার শহরের চেম্বারে হানা দিয়ে এক ভুয়ো চিকিৎসককে হাতেনাতে ধরল পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁর ছয় সহযোগীকেও। পুলিশ সূত্রে খবর, মাধ্যমিক পাস যোগ্যতা নিয়েই চিকিৎসার ব্যবসা ফেঁদে বসেছিলেন শীতলকুচির বাসিন্দা। 


সকালবেলা কোচবিহার শহরে টানটান নাটক। হঠাৎই এক চিকিৎসকের চেম্বারে ঢুকে পড়েন পুলিশকর্মীরা। তাঁরা সেখানে থাকা এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি চিকিৎসক?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘না, আমি রোগী। ডাক্তারবাবুকে দেখাতে এসেছি।’ পর্দা ফাঁস করে দেন চেম্বারে উপস্থিত থাকা এক রোগী। তিনি বলে ওঠেন, ‘না, না উনিই চিকিৎসক। আমাদের চিকিৎসা করেন।’


এই ভুয়ো চিকিৎসকের নাম নাম এমএ আলি। নামে এমএ থাকলে কী হবে, পুলিশ সূত্রে খবর, শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক। প্যাডে লেখা এমবিবিএস, এমডি। স্পেশালাইজেশন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে স্কিন অ্যান্ড নিউরো। রয়েছে রেজিস্ট্রেশন নম্বরও। প্রেসক্রিপশন দেখে মনে হবে, পাকা হাতে লিখেছেন কোনও অভিজ্ঞ চিকিৎসক। 


পুলিশ সূত্রে দাবি, চিকিৎসক পরিচয়ে এভাবেই ব্যবসা ফেঁদে বসেছিলেন  শীতলকুচির বাসিন্দা এমএ আলি। তাঁর কাছে চিকিৎসা করাতে গেলেই বিশেষ ল্যাবে করতে দেওয়া হত গুচ্ছ গুচ্ছ পরীক্ষা। কোচবিহার শহরের মিউনিসিপ্যালিটি মার্কেট রোড এবং রাজরাজেন্দ্র নারায়ণ রোডের ওই চিকিৎসকের দু’টি চেম্বারে হানা দেয় কোতয়ালি থানার পুলিশ। ধৃতদের ল্যাপটপ সহ বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।


কোচবিহারের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকান্ত বিশ্বাস জানিয়েছেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। এরকম অভিযোগ পেলে তদন্ত করব। চাই দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। আমাদের নজরদারি চলছে।’


ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য, চিকিৎসক বিনায়ক রায় বলেছেন, ‘প্রশাসন ব্যবস্থা নিলেও এরা আইনের ফাঁকে ছাড়া পেয়ে যায়। আইএমএ-র কাছ থেকে প্রশাসন সাহায্য চাইলে অবশ্যই করব।’


অন্যদিকে, এই ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। কোচবিহারের বিজেপি সভানেত্রী ও তুফানগঞ্জের বিধায়ক মালতী রাভা রায়ের দাবি, ‘আমরা এটা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা করছি। প্রশাসনকে জানিয়েও কাজ হয় না। রাজনৈতিক দলের নেতারা নিশ্চয় তোলা পায়, তাই এটা চলছে।’


পাল্টা কোচবিহার টাউন ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক বলেছেন, ‘সরকার নিজে সবরকম ব্যবস্থা নিচ্ছে। কোচবিহার শুধু না। লোয়ার অসম থেকে এই ট্রেন্ডটা ঢুকেছে। কোচবিহারে আসছে। বেশিরভাগ ভুয়ো ডাক্তার অসমের পেশেন্টই ধরে। এর মধ্যে প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক কোনও ব্যাপার নেই। যারা ভুয়ো ডিগ্রি নিয়ে মানুষ ঠকিয়ে প্রতারণা করে সরকার তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে।’