শুভেন্দু ভট্টাচার্য, তুফানগঞ্জ: পরিবেশের অংশ হলেও, বর্তমান দিনে বেঁচে থাকার উপযুক্ত পরিবেশই নেই তাদের জন্য। এমন পরিস্থিতিতে ঘড়িয়ালের বংশবৃদ্ধিতে বিশেষ ভাবে উদ্যোগী হয় প্রশাসন, তাতেই ফল মিলল হাতেনাতে। ৩৭টি ঘড়িয়াল শাবকের জন্ম হয়। তার পর থেকে বেশ চলছিল। ভিড় জমছিল কৌতূহলী মানুষের। এবার প্রকৃতির কোলেই ফিরিয়ে দেওয়া হল ঘড়িয়াল শাবকদের। (Cooch Behar News)
কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ ২ নং ব্লকের রসিকবিল মিনি জু-তে গত ২১ বছর ধরে ১১টি ঘড়িয়াল রয়েছে। ওই ১১টি ঘড়িয়ালের মধ্যে চার স্ত্রী ঘড়িয়াল, সাত পুরুষ ঘড়িয়াল। তাদের বংশবৃদ্ধি করতে লাগাতার চেষ্টা চালানো হচ্ছিল। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। উত্তরবঙ্গে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যেহেতু, তাতে আরও সমস্যা দেখা দেয়। (Baby Gharials)
কারণ স্ত্রী ঘড়িয়াল ডিম পাড়লেও বৃষ্টির জলের সংস্পর্শে এসে ডিম পচে যাচ্ছিল। তাই বারং বার শাবকের জন্য চেষ্টা চালালেও, ভেস্তে যাচ্ছিল পরিকল্পনা। শেষ পর্যন্ত ভেবেচিন্তে উপায় বের করা হয়। কৃত্রিম উপায়ে, বালির শয্যা তৈরি করা হয়। সেখানেই ব্যবস্থা করা হয় ডিমগুলি সযত্নে সাজিয়ে রাখার। লাগাতার নজরদারি চলছিল সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে।
কৃত্রিম ওই প্রজনন কেন্দ্রে মোট ৬৬টি ঘড়িয়ালের ডিম রাখা হয়েছিল। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখা হয়েছিল ডিমগুলিকে। সম্প্রতি সেই ডিম থেকেই ৩৭টি ঘড়িয়াল শাবক জন্ম নেয়। পশ্চিমবঙ্গে শুধুমাত্র এই রসিকবিল মিনি জু-তেই কৃত্রিম প্রজনন গড়ে তোলা হয়, তাতেই সাফল্য মিলেছে। একসঙ্গে ৩৭টি ঘড়িয়াল শাবক জন্ম নেয়। গত দেড় বছর ধরে সেখানেই দেখভাল করা হচ্ছিল তাদের।
ওই ঘড়িয়াল শাবকদের দেখতে ভিড় জমাচ্ছিলেন সাধারণ মানুষও। কিন্তু জু কর্তৃপক্ষ এবং চিকিৎসকরা জানান, দেড় বছর বয়সি ওই ঘড়িয়ালদের প্রকৃতির কোলে রাখা উচিত, যাতে স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে ওঠে তারা। সেই মতো মুর্শিদাবাদের উপগঙ্গা নদীর টিকটিক পাড়ার বিশেষ জায়গাকে শনাক্ত করা হয়। সেই মতো এদিন রসিকবিল মিনি জু থেকে মুর্শিদাবাদের উদ্দেশে ঘড়িয়ালগুলিকে নিয়ে রওনা দেয় একটি লরি।তবে জন্ম থেকে এতদিন যাঁরা ঘড়িয়ালগুলিকে বড় করেছেন, বিদায়বেলায় মন খারাপ হয়ে আসে তাঁদের।
Subhendu-কোচবিহার থেকে মুর্শিদাবাদে পাড়ি দিল ৩৭ টি ঘড়িয়াল শাবক । শুক্রবার কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ-২ ব্লকের রসিকবিল মিনি জু থেকে ৩৭ ঘড়িয়াল শাবক পাড়ি দিল মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির উপগঙ্গা নদীর টিকটিক পাড়ার উদ্দেশ্যে। ঘড়িয়াল শাবকদের বিদায় বেলায় মন খারাপ দেখভালের দায়িত্বে থাকা বন কর্মীদের।
কোচবিহার বন বিভাগের এডিএফও এডিএফও বিজনকুমার নাথ জানান, বিশেষজ্ঞদের নির্দেশে ওই ৩৭টি ঘড়িয়াল শাবককে প্রকৃতির কোলে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তবে পরবর্তী কালে যাতে তাদের শনাক্ত করা যায়, তার জন্য ঘড়িয়াল শাবকদের শরীরে বসানো হয়েছে মাইক্রোচিপ। প্রত্যেকের ওজনের রেকর্ড রাখা হয়েছে। জলঙ্গির টিকটিক পাড়ায়, প্রকৃতির কোলে তারা কেমন থাকে, তার উপর নজরদারি চলবে।