দিনহাটা : মনোনয়নের পর এবার স্ক্রুটিনি পর্বেও কোচবিহারের দিনহাটা ২ নম্বর ব্লকের সাহেবগঞ্জে তুলকালাম। তৃণমূল-বিজেপির সংঘর্ষ। নিশীথ প্রামাণিকের গাড়ি লক্ষ্য করে তির ছোড়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সামনেই বোমাবাজি শুরু হয়।
বিজেপির অভিযোগ, দিনহাটা ২ নম্বর ব্লক অফিসে মনোনয়নের স্ক্রুটিনি চলাকালীন পুলিশের সামনেই তাদের প্রার্থীদের মারধর করে বিডিও অফিস থেকে বের করে দেয় তৃণমূল কর্মীরা। নিশীথ প্রামাণিকের অভিযোগ, ১৪৪ ধারা অমান্য করে বিডিও অফিসের সামনে তৃণমূল কর্মীরা জড়ো হন। সংঘর্ষের খবর পেয়ে সেখানে হাজির হন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তাঁকে বিডিও অফিসে ঢুকতে বাধা দেয় পুলিশ। পরে র্যাফ নামিয়ে ও লাঠিচার্জ করে বেআইনি জমায়েত হঠানো হয়।
জেলায় জেলায় অশান্তি, খুনোখুনির মধ্যে শেষ হয়েছে পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্ব। তার মধ্যেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের দাবি তুলে, অনেক জায়গায় তৃণমূলের উল্লাস নজরে এসেছে। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বজবজ, হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের পর কোচবিহারের দিনহাটা। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহর বিধানসভা কেন্দ্র দিনহাটার ২ নম্বর ব্লকে সুকারুর কুঠি ও চৌধুরীর হাট গ্রাম পঞ্চায়েত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গেছে তৃণমূল।
এই প্রেক্ষাপটে দিনহাটা ২ নম্বর ব্লকে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে, কত আসনে তাঁরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন, তার হিসেব দিয়ে ফেসবুকে পোস্টও করেছেন উদয়ন গুহ। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী ও দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ বলেন, 'আমরাও চাই ভোট হোক, কিন্তু মনে হয় না, সব ভোট হবে। কারণ মনোনয়ন পর্বে আরও কয়েকটা পঞ্চায়েতে জয়ী হয়ে যাব। ফাল্গুন মাসে আম গাছে অনেক মুকুল হয়, পরে ঝড়ে অনেক ঝরে যায়। এখানেও ঝড়বৃষ্টি হবে, শিলাবৃষ্টি হবে।'
দিনহাটায় বিজেপির মণ্ডল সভাপতি অজয় রায় বলেন, 'ঠিকই বলেছেন ঝরে যায়, আবার যে আম গাছে থেকে যায়, তা থেকে নতুন গাছ হয়। দিনহাটা ২-তে আমাদের কোনও পঞ্চায়েত ছিল না। এবার আমরা যেটা পাব, সেটাই লাভ হবে। পঞ্চায়েত নির্বাচনেই বোঝা যায়, কার কতটা মুকুল ঝরল।'
দিনহাটায় একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূলের জয়। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, বিজেপির দখলে থাকা কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভার অন্তর্গত শুকটাবাড়ি পঞ্চায়েতেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল। এত কম সময়ে কীভাবে এত মনোনয়ন জমা পড়ল ? ট্যুইটে প্রশ্ন তুলে সুকান্ত মজুমদার লেখেন, মাত্র ৪ ঘণ্টায় ৪০ হাজারের বেশি মনোনয়ন জমা পড়েছে। অর্থাৎ একজনের মনোনয়নে গড় সময় ২ মিনিট। এ থেকেই বোঝা যায় রাজ্য সরকার সন্দেহজনক কিছু করেছে এবং এটা গণতন্ত্রকে উপহাস করা।
২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোচবিহারে পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরে ৩৬ শতাংশ আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয় শাসকদল। যদিও, এক বছর পর লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহার হাতছাড়া হয় তৃণমূলের। একুশের বিধানসভা ভোটেও এই জেলার অধিকাংশ আসনে হারের মুখ দেখতে হয় রাজ্যের শাসক দলকে। এবারের পঞ্চায়েত ভোটে কি জমি পুনরুদ্ধার করতে পারবে তৃণমূল ?