শুভেন্দু ভট্টাচার্য, কোচবিহার: এই প্রথমবার, আনুষ্ঠানিকভাবে পঞ্চানন বর্মার প্রয়াণ দিবস পালন করল তৃণমূল। রবিবার, পঞ্চানন বর্মার ৮৯তম তিরোধান দিবসে কোচবিহারের কদমতলা এলাকায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।
রাজবংশী নেতা ও সমাজ সংস্কারক পঞ্চানন বর্মাকে রাজবংশী সমাজের নবজাগরণের পথিক বলা হয়। আর এই কোচবিহারে রাজবংশী ভোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। এই জেলায় প্রায় ৩৪ শতাংশ রাজবংশী ভোটার রয়েছেন। সেই কারণেই ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজবংশীদের ‘স্বঘোষিত’ মহারাজ অনন্ত রায়ের সঙ্গে দেখা করতে অসমে পৌঁছে গিয়েছিলেন অমিত শাহ। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজবংশীদের ঢালাও সমর্থন পেয়েই সেবার কোচবিহারে ভাল ফল করেছিল গেরুয়া শিবির। বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে সম্প্রতি অনন্ত মহারাজকে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছে বিজেপি।
এই প্রেক্ষাপটে, তৃণমূল এবার ধুমধাম করে রাজবংশী নেতার প্রয়াণ দিবস পালন করল। এর আগে তৃণমূল নেতারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে শ্রদ্ধা জানালেও দলের তরফে এই প্রথমবার আনুষ্ঠানিকভাবে পঞ্চানন বর্মার তিরোধান দিবস পালন করা হল। এটাকে লোকসভা নির্বাচনের আগে, রাজবংশীদের মন পাওয়ার কৌশল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
কোচবিহার তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান গিরিন বর্মন বলেন, 'নেতৃত্বের ওপর নীতি নির্ধারণ করে। এবার দলীয় প্লাটফর্মে তৃণমূল শ্রদ্ধা জানাচ্ছে। আগে কোনও রাজনৈতিক দল করেনি। এতে রাজনীতি, ভোটের সম্পর্ক নেই। সিপিএম, বিজেপি পালন করলে তাদেরও স্বাগত।'
২০১৯-এর লোকসভা ভোটে কোচবিহার আসনটি তৃণমূলের থেকে ছিনিয়ে নেয় বিজেপি। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটেও জেলার ৯টি আসনের মধ্যে ৬টিই বিজেপির দখলে যায়। তবে এবারের পঞ্চায়েত ভোটে কোচবিহারে অপেক্ষাকৃত ভাল ফল করেছে তৃণমূল। জেলার ১২৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১০৫টিই গেছে তৃণমূলের দখলে।
লোকসভা ভোটে কী হবে? রাজবংশীদের আশীর্বাদ কোন দিকে যাবে? সেটাই এখন দেখার।
ইতিমধ্যেই ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে ওই আসনটি বিজেপির থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল। গত বিধানসভা ভোটেও উত্তরবঙ্গে বিজেপির যে প্রভাব দেখা গিয়েছিল। কয়েক মাস আগে হয়ে যাওয়া পঞ্চায়েত ভোটে সেই প্রভাবের ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি উত্তরবঙ্গে। বরং অনেকক্ষেত্রেই প্রায় এক তরফা ভাবে জিতে গিয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, আদতে ভোটই করতে দেয়নি তৃণমূল কংগ্রেস। বাধা দিয়ে, ভয় দেখিয়ে পঞ্চায়েত ভোট করিয়েছে তৃণমূল, তাই এই ফলকে প্রকৃত জনমত বলে মানতেও চায়নি বিরোধীরা। যদিও সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। বছর ঘুরলেই লোকসভা ভোট হওয়ার কথা, তখন কার পাল্লা ভারী হবে? বলবে সময়।
আরও পড়ুন: ৩০ লক্ষ টাকা নগদ! ১৩ কেজি রুপো! মালিক কে?