সত্যজিৎ বৈদ্য, রানা দাস : দুর্ঘটনাগ্রস্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কামরা। ধাক্কার অভিঘাতে রেললাইন ভেঙে ঢুকে গেছে কামরার ভিতর। ভেঙেচুরে, দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে গোটা কামরা। ভয়াবহ এই অবস্থা থেকে যাঁরা প্রাণে বেঁচেছেন , তাঁরা যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে তাঁরা বেঁচে আছেন। দুর্ঘটনাগ্রস্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেস থেকে বেঁচে ফিরেছেন যাঁরা, ভয়াবহ দুর্ঘটনার আতঙ্ক এখনও তাঁদের চোখে-মুখে। 


শনিবার ভোররাতে অনেকেই বাসে করে কলকাতায় ফিরেছেন। এঁদের কেউ চেন্নাই যাচ্ছিলেন চিকিৎসার জন্য, কেউ বা কাজে। দুর্ঘটনার পর কপর্দকহীন অবস্থায় দিশাহারা অবস্থায় হাঁটতে শুরু করেন বালেশ্বরের দিকে। সেখান থেকে বাস ধরে কলকাতায়। এখন তাঁরা দিশেহারা কীভাবে বাড়ি ফিরবেন।                      

ফিরবে কি আর ? 


দুর্ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের কুরুম্ব গ্রামের ইয়াদ আলি শেখ। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে বছর সাতাশের যুবক কাজের খোঁজে পাড়ি দিয়েছিল চেন্নাই। দুর্ঘটনার পর তাঁর বন্ধুর খোঁজ পেলেও, ইয়াদ আলির ফোন বেজে গিয়েছে। দুশ্চিন্তায় রাত কেটেছে বাবা-মায়ের। এখনও তাঁরা জানেন না, ছেলে আদৌ বেঁচে আছেন কি না। 

আরও যাঁরা ঘরে ফেরেননি এখনও 


একই অবস্থা মেদিনীপুরের এক পরিবারের। চিকিৎসার জন্য চেন্নাই যাচ্ছিলেন প্রশান্ত সরকার ও অসীম পাল। এর মধ্যে চন্দ্রকোণা রোডের বাসিন্দা অসীমের খোঁজ মিললেও, সন্ধিপুরের বাসিন্দা প্রশান্তর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি পরিবার। অন্যদিকে গোসাবা থেকে কাজের খোঁজে চেন্নাই পাড়ি দিয়েছিলেন ১২ জন পরিযায়ী শ্রমিক। এখনও কারও খোঁজ মেলেনি। 


হাওড়ার শ্যামপুরের বাসিন্দা পিনাকী মণ্ডল। পায়ে ব্য়থার চিকিৎসা করাতে এই প্রথমবার কটকে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ফেরা আর হল না। বাহানাগা বাজার স্টেশনের কাছেই শ্য়ালিকার বাড়ি। খবর পেয়ে তাঁরা দুর্ঘটনাস্থলে এসে খোঁজ শুরু করে। ততক্ষণে মৃত্যু হয়েছে।  

যাঁরা ফিরে এলেন


এরই মধ্যে আশা জাগাচ্ছে কিছু কিছু ঘটনা। চারজনের মৃতদেহের নিচে চাপা পড়েছিলেন বলেই হয়তো প্রাণে বেঁচেছেন পারুল বিবি। ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে শুয়ে এমনইটাই মনে হচ্ছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর নেবুখালির বাসিন্দা ওই মহিলা। স্বামী ব্যাঙ্গালোরে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন। সেখানে কাজ করেন খুড়শ্বশুর শহিদুল ইসলাম মোল্লাও। করমণ্ডল এক্সপ্রেসে চড়ে খুড়শ্বশুরের সঙ্গে ব্যাঙ্গালোরে যাচ্ছিলেন পারুল। দুর্ঘটনার পর গাড়ি ভাড়া করে ঘরে ফেরেন। শ্বশুর-বৌমা দু’জনেই ভর্তি রয়েছেন হাসপাতালে।