অনির্বাণ বিশ্বাস, সৌমেন চক্রবর্তী ও সুনীত হালদার, হাওড়া: মৃত্য়ুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন ঠিকই। কিন্তু ভুলতে পারছেন না মৃত্য়ু-ভয়। রাজ্য়ে ফিরেও আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে দুর্ঘটনায় জখম এই ব্য়ক্তিদের। অনেকেই শারীরিকভাবে মারাত্মক জখম। তবে, মনের আঘাত তার থেকে অনেক বেশি।
এঁরা প্রত্য়েকেই মৃত্য়ুকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। একেবারেই মৃত্য়ুর দোরগোড়া থেকে ফিরে এসেছেন। এখনও ভুলতে পারছেন না ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা! দুর্ঘটনায় কেউ শারীরিকভাবে ভয়ঙ্কর জখম হয়েছেন। কারও আবার মনের আঘাত মারাত্মক।
অভিশপ্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেসে ছিলেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর বাসিন্দা, মইনুদ্দিন মোল্লা (২৯) কেরলে যাচ্ছিলেন শ্রমিকের কাজ করতে। দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছেন তিনি। পাঁজর, মাথায় গভীর আঘাত লেগেছে।
ওড়িশাতে সেভাবে চিকিৎসা হয়নি, মেদিনীপুরে এসে পেয়েছে ভয়ঙ্করভাবে জখম বর্ধমান ও বোলপুরের আরও ২ পরিযায়ী শ্রমিক। ১ জন বিশাখাপত্তনম ও আরেকজন কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার স্মৃতি তাড়া করে বেড়াচ্ছে, বিহারের বাসিন্দা ১৯ বছরের অনীশ কুমারকেও। চেন্নাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে যাচ্ছিলেন তিনি। তার মাঝেই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা। সেই অন্ধকার রাতের কথা ভুলতে পারছেন না অনীশ।
ট্রেন দুর্ঘটনায় জখম অনীশ কুমারের কথায়, ঘন অন্ধকারের মধ্যে চিৎকার আর কান্নার রোল। অনীশ রক্তাক্ত অবস্থাতেই তার মোবাইল থেকে বাড়িতে বাবাকে ট্রেন দুর্ঘটনার খবর জানান। এরপরই মাথা থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে সেখানে বেহুশ হয়ে পড়েছিলেন। এরই মধ্যে লুট হয়ে যায় পকেটে রাখা তিন হাজার টাকা এবং ৯০০০ টাকা দামের মোবাইল সেট।
আহত অনীশ কুমারের বাবা বলছেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ৩০ হাজার টাকা খরচ করে অ্যামবুল্য়ান্স নিয়ে বালেশ্বরে এসে উপস্থিত হন। কিন্তু ছেলেকে সেখানে না পেয়ে বাসে চেপে কটকে যান। সেখানকার হাসপাতালেই ছেলেকে খুঁজে পান। ছেলে অনিশের মাথা, কোমর , হাতে এবং পায়ে চোট আছে।
অবশেষে ছেলেকে নিয়ে হাওড়া এসে পৌঁছেছেন অনীশের বাবা। মুখে স্বস্তির ছাপ। কিন্তু যাঁরা এখনও খোঁজ পাননি প্রিয়জনের? একের পর এক হাসপাতাল কিম্বা, ভুবনেশ্বর এইমস-এর এই মনিটরের দিকে চোখ রেখে খুঁজে চলেছেন প্রিয়জনের মুখ।