কলকাতা: ভারতের ইতিহাসে অন্যতম কালোদিন। শনিবার রাতে ওড়িশার বালেশ্বরে বীভৎস ট্রেন দুর্ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে দেশবাসীকে। জীবন-মৃত্যুর মাঝামাঝি আটকে পড়ে বালেশ্বরে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন যাত্রী তথা গোটা দেশ। বেঁচে ফিরলেও কেউই ভুলতে পারছেন না সেই বিভীষিকার রাত। শুধু যাত্রীরা নন।  ঘটনার তীব্রতা প্রভাবিত করেছে প্রায় সকলকেই। তার মধ্যেই স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে একাধিক অস্বস্তিকর ছবি, ভিডিও এবং ভুয়ো খবর। যা কার্যত বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে মানুষের মধ্যে। 


শুক্রবার বালেশ্বরে দুর্ঘটনার পর থেকেই ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে সারি সারি মৃতদেহের ছবি। যার আদৌ কোনও তথ্য সূত্র নেই। সে সব ছবি আদৌ করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার ছবি কি না তারও কোনও নিশ্চয়তা নেই। ভিডিও দেখা গিয়েছে একাধিক। বহু পুরনো ছবি ভিডিও ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে। পাশাপাশি ছড়িয়েছে আরও ভুয়ো খবর। গতকাল সকাল থেকেই একটি পোস্ট ভাইরাল হয় ফেসবুকে। যেখানে লেখা হয়েছে বালেশ্বর থেকে যাত্রীদের ফিরিয়ে আনার একটি বাস পূর্ব মেদিনীপুরে উল্টে যায়। স্বাভাবিকভাবেই যা উত্তেজনা তৈরি করে সাধারণের মধ্যে। বলার অপেক্ষা রাখে না ঝড়ের গতিতে শেয়ার হয়েছে খবরটি। 


শেষ নয় এখানেই। হেল্পলাইন নম্বরের নামে দিনভর একাধিক ফোন নম্বরও ঘুরেছে ফেসবুকের দেওয়া দেওয়ালে। সব ভুয়ো না হলেও প্রায় ৩০ শতাংশেরই কোনও অস্তিত্বই নেই। নেটিজেনরা থেমে থাকেননি এখানেই রাজনৈতিক ইস্যুতেই নিয়েও চলছে বাকযুদ্ধ। আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে কার্যত ফুটছে স্যোশাল মিডিয়া। শুধু কি তাই? রয়েছে আরও বিষয়! দুর্ঘটনার খবর সামনে আসতেই সাহায্য করতে চেয়ে রক্তদানের ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন অনেকেই। স্যোশাল মিডিয়ার সেই পোস্টের কমেন্টেও ভুয়ো তথ্য দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু জায়গায়। যেখানে রক্তদান করলে হয়ত আক্রান্তের  কাছে পৌঁছবে না।


শনিবার থেকে দিনভর স্যোশাল মিডিয়ায় চোখে পড়েছে নানান ভুয়ো খবর। উড়িষ্যায় আটকে পড়া অনেকেই ফেরার জন্য গাড়ি খুঁজছেন, সেই পোস্টেও মিসলিডিং কিছু তথ্য মিলেছে। লাইক, কমেন্ট, শেয়ার রিচ পেয়ে একাধিক ভুয়ো পেজের পোস্টও এই রেসে পিছিয়ে নেই। নেটিজেনদের আকর্ষমে মর্মান্তিক সব পন্থা অবলম্বন করেছেন তাঁরাও। যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নেটিজেনদের একাংশ। তবে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরেই তাকে কেন্দ্র করে এমন ভুয়ো খবরে, পরিস্থিতি কার্যত গোদের ওপর বিষ ফোঁড়ার মতোই । 


একলহমায় সব শেষ, দুর্ঘটনাগ্রস্ত শালিমার-চেন্নাই করমণ্ডল এক্সপ্রেস, যশোবন্তপুর-হাওড়া এক্সপ্রেস ও একটি পন্যবাহী গাড়ির দুর্ঘটনা রাতারাতি বদলে দিয়েছে অনেকের জীবন। কেউ কাজ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। কেউ বাড়ি থেকে যাচ্ছিলেন কাজে। কিন্তু মাঝপথেই ওলট-পালট হয়ে গেল সব হিসেব। ধেয়ে এল মৃত্যুর হাতছানি। চারদিকে শুধু মৃতদেহ আর কান্নার রোল। সেই বিভিষিকার মধ্যেও, কোনও রকমে প্রাণ নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন সুরজিৎ, অনুজা, সায়ন্তনীদের মতো কয়েকজন। ট্রমা রয়েছেই। এরই মধ্যে আর কোনও বিভ্রান্তিকর খবর বা তথ্য একেবারেই মানতে পারছেন না কেউ।