ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা : স্কুল-কলেজ খুলে গেছে। বাসে, মেট্রোয়, ট্রেনে, স্টেশনে সেই চেনা ভিড়। দোকান-পাট, বাজারহাট গমগম করছে। বিনোদন পার্ক থেকে পর্যটন কেন্দ্র । আগের মতোই সরগরম। বহু প্রতীক্ষিত সেই মন ভাল করা ছবি। তবে এই স্বস্তির মধ্যেই চিকিৎসকরা বলছেন, একটু একটু করে ফের বাড়ছে করোনা!

তাহলে কি ভারতে করোনার চতুর্থ ঢেউ আছড়ে পড়েছে?


 দেশজুড়ে করোনা (Coronavirus) সংক্রমণ যে বাড়ছে, তা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। তথ্য বলছে, গত মঙ্গলবার দেশে একদিনে করোনা আক্রান্ত হন ১৩ হাজার ৬১৫ জন। বুধবার সেই সংখ্যা আরও বেড়ে হয় ১৬ হাজার ৯০৬। বৃহস্পতিবার দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যাটাই একলাফে পৌঁছে যায় ২০ হাজার ১৩৯-এ। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা সামানো কমে হয়েছে ২০ হাজার ৩৮ জন। 

বাড়তে শুরু করেছে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা
তবে হঠাৎ করেই বাড়তে শুরু করেছে দৈনিক মৃত্যুর (Daily Death) সংখ্যা! গত মঙ্গলবার দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছিল ২০ জনের। বুধবার সেই সংখ্যাটাই বেড়ে হয় ৪৫! বৃহস্পতিবার একদিনে দেশে ৩৮ জন করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছিল। আর গত ২৪ ঘণ্টায় সেই সংখ্যাটা এক লাফে বেড়ে হয়েছে ৪৭! 


চিকিৎসক রাজা ধর জানাচ্ছেন, যত ভাইরাস আছে, সেই ভাইরাসের ফর্ম চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে, এগুলো ভাইরাল মিউটেশন বলা হয়। সেই অনুযায়ী ভ্যাকসিন তৈরি করতে হবে। 


বাংলাতেও বাড়ছে করোনা
স্বাস্থ্য দফতরের শুক্রবারের পরিসংখ্যান বলছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজারের বেশি মানুষ সংক্রমণের কবলে পড়েছেন। বৃহস্পতিবারও সংখ্যাটা ছিল ৩ হাজারের ওপরেই। তবে শুক্রবার দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের।



  • জেলাগুলির মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত ৬৯৩ জন।

  • কলকাতায় দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৬৫৩। 


চিকিৎসক অজয় সরকার জানাচ্ছেন, আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়বে, দৈনিক বাড়বে, এই নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই, মৃদু উপসর্গ থাকবে। 

শিশুদের উপর কী প্রভাব


ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ শাশ্বতী সিন্হা জানাচ্ছেন, করোনার কারণে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছিল শিক্ষা ব্যবস্থা। দীর্ঘ ২ বছর ধরে বন্ধ ছিল স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়। পড়াশোনা সবটাই চলেছে অনলাইনে। 
এর ফলে পঠন পাঠনে যথেষ্ট প্রভাব পড়েছে। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের পরে এখন স্কুল খুলেছে। শিশুরাও স্কুলমুখী।  এই পরিস্থিতিতে করোনার চতুর্থ ঢেউ চোখ রাঙালেও, চিকিৎসকরা বলছেন, রোগের প্রকোপে ঘাবড়ে গেলে হবে না। স্কুলে যাওয়া অত্যন্ত জরুরি। স্কুলে যেতেও হবে। শুধু সতর্ক থাকতে হবে।


শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রভাসপ্রসূন গিরি জানাচ্ছেন, বাচ্চাদের হচ্ছে ঠিকই, ঘাবড়ানোর কিছু নেই। সতর্কতা থাকলেই, চিন্তার কিছু নেই। 


শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ জয়দীপ চৌধুরী বরং জোর দিচ্ছেন বাড়ির বড়দের সাবধান থাকার উপর। কারণ বড়দের থেকেই বাচ্চাদের রোগ ছড়ায়। তবে স্কুল খোলা রাখতেই হবে । 


মাস্ক পরা থেকে ভিড় এড়িয়ে চলা, করোনা প্রতিরোধে সতর্কতাই সবচেয়ে বড় মূলধন। সেকথাই বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।