মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রসূন চক্রবর্তী, পশ্চিম বর্ধমান: একদিকে ফাটল, অন্যদিকে ধস। উত্তরাখণ্ডের (Uttarakhand) জোশীমঠের (Josimatha) এই ছবি, রাতের ঘুম কাড়ার পক্ষে যথেষ্ট! কিন্তু জোশীমঠের (Josimatha) মতোই কি ভয়ঙ্কর অবস্থা, পশ্চিমবঙ্গের ধসপ্রবণ রানিগঞ্জেরও? মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee) সেই প্রসঙ্গ উস্কে দেওয়ার পর থেকেই উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন।


মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতি জোশীমঠে। আগে বন্দোবস্ত করলে এই দিন দেখতে হত না। একই অবস্থা রানিগঞ্জে (Raniganj)। রানিগঞ্জ বিধানসভার এগারা (Egara), হরিশপুর, মহাবীর, বাঁশঢ়া--এই সব এলাকা অত্যন্ত ধসপ্রবণ! কারণ এইসব এলাকা জুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ইসিএলের কয়লাখনি!


প্রশাসনের তরফে বিপজ্জক বোর্ড: অভিযোগ, কয়লা তুলে নেওয়া হলেও, ঠিকঠাক স্যান্ড ফিলিং না করায়, ওপরের মাটি ধসে গিয়ে বারবার বিপত্তি ডেকে আনে! সঙ্গে রয়েছে কয়লা চুরির ফলে তৈরি হওয়া বিপদ! ধস নিয়ে সতর্ক করতে বিপজ্জক বোর্ডও লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে। 


এটা রানিগঞ্জের এগারা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। পাশেই রয়েছে ইসিএলের অমৃতনগর কয়লা খনি। স্থানীয়দের অভিযোগ, একটা সময় টানা এই এলাকা থেকে গর্ত খুঁড়ে বেআইনিভাবে কয়লা তোলা হত।  বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, গোটা এলাকা জুড়ে ফাটল তৈরি হয়েছে। আর সেই ফাটল থেকে বেরিয়ে আসছে ধোয়া, গ্যাস।


এই পরিস্থিতিতে পুনর্বাসন না মেলায়, বাধ্য হয়ে জীবনকে বাজি রেখে এখানে বসবাস করছেন একাধিক পরিবার। বাড়ি ঘরেও ফাটল স্পষ্ট। এখান থেকে ৪-৫ কিলোমিটার দূরেই হরিশপুর গ্রাম। সেখানে ঢুকতে প্রথমেই চোখে পড়বে হরিশপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। 


ধসের কড়াল গ্রাস পড়েছে এখানেও: স্কুলের ঠিক পিছনেই রয়েছে মাধবপুর খোলামুখ খনি। দেখে পুকুর মনে হলেও, আদতে এখান থেকেই তোলা হত কয়লা! গ্রামের দিকে যত এগনো গেছে, ততই ফাটল ও ধসের ছবি আরও মারাত্মক হয়েছে। 


ফাটলের জেরে কোনও বাড়ি হেলে পড়েছে! কোনওটি আবার পুরোটাই বসে গেছে! যাদের আর্থিক সামর্থ আছে, তাঁরা অন্যত্র চলে গেছেন। কিন্তু যাঁদের সেই ক্ষমতা নেই, প্রাণ হাতে করে তাদের এখানেই থেকে যেতে হয়েছে! এখনও প্রায় ৪০০ পরিবারের বাস এখানে!
 
কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি, তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী দায় চাপিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের ঘাড়ে! আর তা নিয়েই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। পশ্চিম দুর্গাপুরের বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘড়ুই-এর কথায়, মুখ্যমন্ত্রী যেটা বলেছেন, সেটা ঠিক বলেছেন। তবে এর জন্য দায়ী থাকবে রাজ্য সরকার। আমাদের ডেকে, আড্ডার সঙ্গে বৈঠকে বসুক। একসঙ্গে যাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে। আমাদের ওরা ডাকেও না, জানাও না। রাজ্য সরকার কিছুই করে না।


বামেরা আবার দুপক্ষকেই সমান দুষেছে!রানিগঞ্জের ধসপ্রবণ এলাকায় বাসিন্দাদের পুনর্বাসন নিয়ে এই রাজনৈতিক তরজা আজকের নয়! কিন্তু আজও অধরা সমাধান সূত্র! আদৌ কি পুনর্বাসন মিলবে? সেই প্রশ্নের উত্তর পেতেই মরিয়া এলাকার বাসিন্দারা।