হিন্দোল দে, শান্তনু নস্কর ও জয়দীপ হালদার, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ঘূর্ণিঝড় (Cyclone) আমফান (Amphan) এবং ইয়াসের (Yaaas) সময়, জলোচ্ছ্বাসে কাঁচা বাঁধ (Dam) ভেঙে, ভেসে গেছিল নদী-তীরবর্তী বহু গ্রাম। তারপর থেকেই কংক্রিটের পাকা বাঁধের দাবিতে সরব, এই সব গ্রামের বাসিন্দারা। কিন্তু, সেই বাঁধ কি তৈরি হয়েছে? তা দেখতেই আমরা পৌঁছেছিলাম বিভিন্ন গ্রামে। 


আমফান এবং ইয়াসের সময় প্রকৃতির রুদ্রমূর্তির সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হয়েছিল দুই ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরের বহু গ্রামের বাসিন্দাকে। কাঁচা বাঁধ ভেঙে গ্রাম কে গ্রাম ভাসিয়ে দিয়েছিল নদীর জল। পাকা বাঁধ না থাকার মাসুল গুনেছিলেন এই গরিব মানুষগুলো। এবার অশনিতে আবার নদী ফুঁসে উঠলে, সেই ধাক্কা সামলাতে বাঁধগুলো কতটা তৈরি? কতটা বাঁধ কংক্রিটের হয়েছে? জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, নামখানা ব্লকে প্রায় ২৫১ কিলোমিটার বাঁধ আছে। তার মধ্যে পাকা বাঁধ মাত্র ২১ কিলোমিটার। কাঁচা বাঁধ ২৩০ কিলোমিটার। নামখানা ব্লকের পাতিবুনিয়া গ্রামে এই বাঁধের অবস্থা দেখেই বোঝা যায়, জলোচ্ছ্বাস আটকানোর ক্ষমতা তার নেই। 


আরও পড়ুন, অশনি কি শক্তি হারাচ্ছে? বঙ্গে কেমন প্রভাব? কোথায় বৃষ্টি?


দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাতিবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা কবিতা প্রধান বলেন, "লক্ষ্মীর ভাণ্ডার চাই না। আমরা চাই বাঁধ মেরামত হোক।" একই অবস্থা নামখানা ব্লকের অন্তর্গত পূর্ব বিজয়বাটি গ্রামের। গ্রামকে রক্ষা করার জন্য যে বাঁধ তা মাটি দিয়ে তৈরি কাঁচা বাঁধ। এই জেলারই গোসাবা ব্লকে ৩৭২ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। তার মধ্যে পাকা বাঁধ মাত্র ১৪ কিলোমিটার। বাকি বিস্তীর্ণ এলাকায় কাঁচা বাঁধ। আমফান-ইয়াসের সময় এই কাঁচা বাঁধ ধুয়ে-মুছে গেছিল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনাগাঁর বাসিন্দা অরিন্দম মণ্ডল বলেন, "খাবার চাই না, ত্রাণ চাই না, কংক্রিটের নদীবাঁধ চাইছি। আমরা বাঁচতে চাই।" গঙ্গাসাগর গ্রাম পঞ্চায়েতের মনীষামারি গ্রামে প্রায় ২০০ ফুট বাঁধ ইয়াসের সময় ভেঙে গেছিল। প্লাবিত হয়েছিল বিস্তীর্ণ এলাকা। ঘরছাড়া হয়েছিলেন বহু মানুষ। তাই ঘূর্ণিঝড়ের নাম শুনলেই এখানকার বাসিন্দাদের বুক কেঁপে ওঠে। 


‍একইরকম অনিশ্চয়তাকে সঙ্গী করে জীবনযাপন করছেন, উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা। এই মানুষগুলোর সাফ কথা, কংক্রিটের বাঁধ ছাড়া এই সমস্যার কোনও সমাধান নেই। এখনও কেন সব জায়গায় কংক্রিটের বাঁধ তৈরি হল না? প্রশ্ন বিরোধীদের। আয়লার পর, দুই ২৪ পরগনায় কংক্রিটের বাঁধ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। আর কতদিন এভাবে চলবে?