ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, পুরুষোত্তম পণ্ডিত ও ঐশী মুখোপাধ্যায়, কলকাতা : 'জল-যন্ত্রণা'র চেনা ছবি ! কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় জমল জল । কলকাতার অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় জল জমে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। ঘূর্ণিঝড় 'দানা'-র প্রভাবে ভোর থেকে টানা বৃষ্টি। তার জেরে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউর বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট ক্রসিং জলমগ্ন। রাস্তার এক প্রান্ত দিয়ে গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়। কারণ, অন্য প্রান্তে জল জমে একাকার। এর পাশাপাশি শ্যামবাজার-সহ উত্তর কলকাতার বিস্তীর্ণ জায়গা, মুক্তারাম বাবু স্ট্রিট, ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি, স্ট্র্যান্ড রোড সংলগ্ন নর্থ পোর্ট থানা সংলগ্ন জায়গায় জল জমে রয়েছে। ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির ঠিক পাশে বিধান সরণিতে জমেছে জল। জল সরানোর জন্য সুপার সাকশন পাম্প পাঠানো হয় কলকাতা পুরসভা থেকে। দক্ষিণ কলকাতারও বিভিন্ন জায়গায় জল জমে গিয়েছে। অধিকাংশ রাস্তা জলমগ্ন থাকলেও, দুর্ভোগের পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি। কারণ, আজ অন্যান্য দিনের তুলনায় গাড়ির সংখ্যা অনেকটা কম। শুক্রবার হলেও, দুর্যোগের কথা ভেবে অনেকেই গাড়ি নিয়ে বেরোননি। ফলে, যানজটের পরিস্থিতি কোথাও এখনও পর্যন্ত তৈরি হয়নি। এদিকে কোথাও গাছ পড়ে যানবাহন আটকে গিয়েছে, এখন পর্যন্ত এরকম কোনও খবরও নেই।


আশঙ্কা থাকলেও ঘূর্ণিঝড় দানার বিশেষ প্রভাব পড়ল না বাংলায়। ধামারার কাছে ল্যান্ডফল করে ওড়িশাতেই 'অ্যারেস্ট' ঘূর্ণিঝড়। সকালেই ল্যান্ডফলের প্রক্রিয়া শেষ করে ধীরে ধীরে শক্তি হারাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় দানা। ঝড়ের দাপট না থাকলেও বৃষ্টিতে ভাসছে দক্ষিণবঙ্গ। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব সবথেকে বেশি পূর্ব মেদিনীপুরে। উপকূলবর্তী এলাকায় ৮০ থেকে ৯০ কিমি বেগে বইতে পারে ঝোড়ো হাওয়া।
নন্দীগ্রাম-খেজুরি-এগরায় ভাঙল গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি।


নবান্ন থেকে অনবরত নজরদারি চালাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। ৭ জেলার জেলাশাসকের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। জেলাগুলি হল- পূর্ব মেদিনীপুর ও পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলি, ঝাড়গ্রাম ও বাঁকুড়া। জেলাশাসকরা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, পূর্ব মেদিনীপুরের অবস্থা সবথেকে খারাপ। দিঘায় প্রবল ঝড়-বৃষ্টি, সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছে। একই অবস্থা মন্দারমণি এবং তাজপুরে। মন্দারমণিতে নিচু এলাকায় প্রচুর পরিমাণে নোনো জল ঢুকে গিয়েছে। ঝড়ের দাপটে প্রচুর গাছপালা পড়েছে। অন্যদিকে, বকখালিতেও প্রবল জলোচ্ছ্বাস, বৃষ্টি হচ্ছে। হিঙ্গলগঞ্জ, টাকি, গোসাবা, সাগর, নামখানা ...এইসব জায়গাতেও প্রায় একই রকম অবস্থা। বনগাঁয় বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আগেই সেখানে বিভিন্ন এলাকায় জল জমে ছিল। সেখানে নতুন করে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় বহু এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। ইতিমধ্যেই ২ লক্ষ ১১ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন। ১ হাজার ২২৭টি ত্রাণ শিবির সরকারের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে। যেসব এলাকায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে, সেখানে অস্থায়ীভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।