সনৎ ঝা, অরিত্রিক ভট্টাচার্য, রাজীব চৌধুরী, শিলিগুড়ি ও কলকাতা: কাল  রাজ্যের চার পুরসভার (Municipal Election 2022) ভোটের ফল ঘোষণা (Poll Counting)। এই চারটি পুরসভার মধ্যে রয়েছে শিলিগুড়িও (Siliguri)।  ফল ঘোষণার আগে কংগ্রেসকে জোট বার্তা শিলিগুড়ির প্রাক্তন মেয়র তথা সিপিএম নেতা  অশোক ভট্টাচার্যের।  তাঁর এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি  অধীর চৌধুরী।  তবে এ সব কিছু উড়িয়ে তৃণমূলই বোর্ড গড়বে বলে  দাবি কুণাল ঘোষের। অন্যদিকে, বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের দাবি, সন্ত্রাস হলেও জিতবে বিজেপি।


এবারও কি শিলিগুড়ি মডেলেরই পুনরাবৃত্তি? জল্পনা বাড়িয়ে ভোট শেষ হতেই কংগ্রেসের সমর্থন চাইলেন অশোক ভট্টাচার্য। পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিলেন অধীর চৌধুরীও। বাম-কংগ্রেসের  বোঝাপড়া নিয়ে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে তৃণমূল। গুরুত্ব দিচ্ছে না বিজেপিও।


ভোটের পর দিন অশোক ভট্টাচার্য বলেছেন, যা তথ্য পেয়েছি তাতে মনে হয়েছে ভাল সংখ্যা নিয়ে বোর্ড গড়তে পারব। প্রয়োজনে কংগ্রেসের সহযোগিতা চাইব। তাদের সঙ্গে সমঝোতার পথে যাব। 


এ ব্যাপারে অধীর চৌধুরী বলেছেন, যদি বামেরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায়, আমাদের যদি সাহায্যের দরকার হলে ১০০ বার আমরা সাহায্য করব।


এভাবে ভোট মিটতেই শিলিগুড়িতে কংগ্রেসকে জোট বার্তা দিয়েছেন অশোক ভট্টাচার্য। আগেভাগে বামেদের সমর্থনের কথা জানিয়ে রাখলেন অধীর চৌধুরীও। এর ফলে প্রশ্ন উঠেছে, এবারেও কি সেই শিলিগুড়ি মডেলেরই পুনরাবৃত্তি? পুরভোট শেষ হতে না হতেই জল্পনার স্রোত শিলিগুড়িতে। এবার পুরভোটে বাম ও কংগ্রেসের মধ্যে জোট বা সমঝোতা, কোনওটাই হয়নি। তবে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে,গতবার কংগ্রেসের জেতা ৪টি ওয়ার্ডে এবার প্রার্থী দেয়নি বামেরা। 


শিলিগুড়িতে চর্তুমুখী লড়াই হলেও, গণনার ২৪ ঘণ্টা আগে কংগ্রেসকে জোট বার্তা দিয়ে রাখল সিপিএম। এই প্রেক্ষাপটে চর্চায় ফিরে এসেছে সেই শিলিগুড়ি মডেলের কথা।২০১৫-র পুরভোটে ৪৭ আসনের শিলিগুড়ি পুরসভার ২৩টি ওয়ার্ডে জেতে বামফ্রন্ট।তৃণমূল ১৭, কংগ্রেস ৪, বিজেপি ২ ও নির্দল জেতে একটি ওয়ার্ডে।নির্দলের সমর্থনে বোর্ড গড়ে বামেরা।কিন্তু, বোর্ড গড়ার এক বছরের মধ্যেই মৃত্যু হয় নির্দল কাউন্সিলরের।এরপর বাম পরিচালিত পুরবোর্ডের পাশে থেকেছে কংগ্রেস।বোর্ড মিটিংয়ে প্রস্তাব পাসের ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু বামেদেরই সমর্থন জানিয়েছে তারা।বরো চেয়ারম্যান নির্বাচনেও কংগ্রেসকে সমর্থন করেছিল বামেরা।


অশোক ভট্টাচার্য  বলেছেন, আমরা মনে করি ২০১৫-র পুনরাবৃত্তি হবে। ভোটের আগে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা না হলেও ভোটের পর সমঝোতা হবে। প্রয়োজন হলে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার পথে যাব। 


অধীর চৌধুরী বলেছেন, খুব খুশি হব যদি হয়। কারণ এর আগেও তো আমরা বামেদেরকে সমর্থন করেছিলাম। যদি বামেরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায়, আমাদের যদি সাহায্যের দরকার হলে ১০০ বার আমরা সাহায্য করব।


তবে এ ব্যাপারে তীব্র কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। কুণাল ঘোষ বলেছেন, অশোকদা অসুস্থ ছিলেন। মানুষ এমনভাবে রায় দেবেন যে আপনাদের কোনও চাপ পড়বে না। জোট বা বোর্ড গঠনের চাপ আমরা আপনার উপর দিতে চাই না। তৃণমূল নিশ্চিন্তে বোর্ড গঠন করবে, আপনি বিশ্রাম নিন।
বাম-কংগ্রেসের তৎপরতা আমল না দিয়ে, বিজেপির দাবি তারাই বোর্ড গড়বে। শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেছেন, বিজেপি যে অঙ্গীকার করেছিল তা আগামীকাল বাস্তবায়িত হতে চলেছে। আগামীকাল শিলিগুড়িতে বিজেপির বোর্ড আত্মপ্রকাশ করবে, ১০০ শতাংশ নিশ্চিত। 
 ২০০৯ ও ২০১৫-র পুরভোটে শিলিগুড়ির ফল হয়েছিল ত্রিশঙ্কু। এবার কি হবে? নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে কেউ? নাকি ফের ত্রিশঙ্কু দশা?  জল্পনার উত্তর পাওয়া যাবে সোমবার।