সমীরণ পাল, দেগঙ্গা: সরকারি জমি দখলমুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তারপর থেকেই শুরু হয়েছে প্রশাসনিক তৎপরতা। এবারের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি দখল করে দোতলা বাড়ি ও দোকান ঘর নির্মাণ ঘিরে শুরু হল রাজনৈতিক তরজা। 


মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন কোনও সরকারি সম্পত্তি দখল করা যাবে না। তার উপরে অবৈধ নির্মাণও বরদাস্ত করা হবে না। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রী সেই নির্দেশিকাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দেগঙ্গার চাঁপাতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফদার আটি চাঁদপুর এলাকায় চাঁদপুর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি দখল করে চলছে দুতলা বাড়ি নির্মাণের কাজ। চাঁপাতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেসের সদস্য হাবিব রেজা চৌধুরী অভিযোগ করেন, চাঁপাতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফদার আটি চাঁদপুর এলাকায় সরকারি বিদ্যালয়ের জমি দখল করে প্রকাশ্যে দিবালোকে দুতলা বাড়ির নির্মাণ চলছে। এর আগে একটি দোকান ঘরও নির্মাণ করেছে। এটি সম্পূর্ণ চাঁপাতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের স্বামী ও স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য কাটমানি নিয়ে সরকারি স্কুলের জমিতে বাড়ি নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। এক বছর হয়নি পঞ্চায়েত গঠন হয়েছে তার মধ্যেই গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী একের পর এক দুর্নীতি করে চলেছেন। অবিলম্বে এই ধরনের প্রধানের আমরা অপসারণ চাই। চাঁদপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৫ শতক জমিতে স্কুলের বিল্ডিং রয়েছে বাকি যে অংশটুকু পড়েছিল সেই জমিতেই স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ শকের আলি মণ্ডল বিল্ডিং নির্মাণ করছেন। আমাদের ক্যামেরার সামনে তিনি প্রথমে জমির নথিপত্র দেখাতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন এবং বলেন আদালতে দেখে নেব। অবশেষে তিনি ওই জমির কোনও বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।


এদিকে এই নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বারাসাত সাংগঠনিক জেলার বিজেপির সভাপতি তরুণকান্তি ঘোষ বলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যা বলেন তা শুধু আই ওয়াশ করার জন্য বলেন। তৃণমূল দলের কিছু নেতা-মন্ত্রীদের কাটমানি দিয়ে নিচুতলার নেতারা সরকারি জমি এতদিন একে অন্যের নামে হস্তান্তর করে দিত। এবার স্কুলের জায়গা কাটমানির বিনিময়ে অন্যের হাতে বিল্ডিং নির্মাণ করতে দিয়েছে এটা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে ধিক্কার জানাই এবং প্রশাসনকে বলব অবিলম্বে সরকারি বিদ্যালয়ের জমিতে যে বিল্ডিং নির্মাণ হচ্ছে তা বন্ধ করা হোক।


চাঁপাতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এলাকায় নেই বলে জানান। পাশাপাশি এই বিষয় নিয়ে চাঁপাতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হুমায়ন রেজা চৌধুরী জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী কোনও বাড়ি বা বহুতল নির্মাণ করতে হলে পঞ্চায়েতের অনুমতিপত্র নিতে হয়। কিন্তু যে ব্যক্তি এই বাড়ি নির্মাণ করছেন বিদ্যালয়ের জমির উপরে তিনি কোনও অনুমতি নেননি। বিজেপি যে দুর্নীতি বা কাটমানির কথা বলছে এর সঙ্গে পঞ্চায়েতের কেউ জড়িত নয় যদি কেউ জড়িত থাকে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবে।


পাশাপাশি দেগঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষার কর্মাধ্যক্ষ এনামুল মোল্লা জানিয়েছেন, সরকারি বিদ্যালয়ের জমিতে কখনও অবৈধ নির্মাণ হতে পারে না। ওই ব্যক্তি কীভাবে স্কুলের জমির উপরে বাড়ি নির্মাণ করছেন সেটা তদন্ত করে দেখছি। পাশাপাশি স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানকে নির্দেশ দিয়েছি নোটিশ করে কাজ বন্ধ করার এবং অভিযুক্ত যে ব্যক্তি বাড়ি নির্মাণ করছেন তিনি তাঁর বাড়ির সঠিক নথিপত্র না দেখাতে পারলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।