সন্দীপ সরকার, কলকাতা : গ্রীষ্ম পড়তে না পড়েই মাথাচাড়া দিচ্ছে ডেঙ্গি দুশ্চিন্তা। প্রতিবারই মশাবাহিত এই রোগে পর্যুদস্ত হয় রাজ্য। হাসপাতালে এক্র পর এক রোগী ভর্তি, রক্তের চাহিদা আকাশচুম্বি, প্লেটলেটের জন্য হাহাকার। এই ছবি যাতে আর দেখতে না হয়, তাই এবার আগেভাগেই ব্যবস্থা নিচ্ছে রাজ্য প্রশাসন। ডেঙ্গির ক্ষেত্রে অতি বিপজ্জনক ও বিপজ্জনক পুরসভাগুলির তালিকা প্রকাশ করল রাজ্য নগরোন্নয়ন সংস্থা।


সূত্রের খবর, তালিকায় হাওড়া, রাজারহাট নিউটাউন, সোনারপুর, উত্তর ও দক্ষিণ দমদম, শিলিগুড়ির মতো পুর এলাকাগুলির নাম রয়েছে। তালিকায় ৪৩টি পুরসভাকে চিহ্নিত করা হয়েছে ডেঙ্গির ক্ষেত্রে অতি বিপজ্জনক হিসেবে।  ৮৩টি পুরসভা বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই ৪৩টি পৌরসভার মধ্যে শুধুমাত্র উত্তর ২৪ পরগণাতেই ২৬টি পৌরসভা রয়েছে। আরও ৬৩টি পুরসভা মাঝারি ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে। গত বছরের উপর ভিত্তি করে এই তালিকা করা হয়েছে।


প্রশাসন সূত্রে খবর, এই সব এলাকাগুলিকে টার্গেট করে অনেকগুলি দল গঠন করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন এলাকায় জমা জল পরিস্কার, ব্লিচিং ছড়ানো, ইত্যাদি কাজ করবে। মশা যাতে এইসব জায়গায় বংশবিস্তার করতে না পারে, তার জন্য উদ্যোগী হবে এই দলগুলি। 


গত দুই বছরে সরকারের কাছে ডেঙ্গি মোকাবিলা আরও কঠিন হয়েছে। কারণ, একদিকে যেমন করোনার প্রভাব ছিল, তেমনই ডেঙ্গির বিস্তার রোধে নজর দিতে হয়েছে সরকারকে। গত কয়েক বছরে  অনেক ডেঙ্গি আক্রান্তের প্রাণ গিয়েছে । ডেঙ্গি মোকাবিলায় সর্বপ্রথম যে কাজটি করতে হবে তা হল এলাকায় এবং বাড়ির আশেপাশে  যাতে জল না জমে , তা দেখা। ডেঙ্গু মশা প্রধানত জমা জলেই বংশ বিস্তার করে। 


গতবছর করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ায় ডেঙ্গি।  প্রকোপ কমেনি মশাবাহিত এই রোগের।  গত ডিসেম্বরে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের চিঠিতে উঠে আসে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। কলকাতা পুরসভার কমিশনার, রাজ্যের সব পুরসভার প্রশাসক ও চেয়ারম্যানকে পাঠানো, পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অতিরিক্তি সচিবের চিঠির ছত্রে ছত্রে ছিল গাফিলতির অভিযোগ। ৩০ নভেম্বরের পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সার্ভে টিম ও পুর কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে।সেই চিঠিতে দাবি করা হয়, সমন্বয়ের অভাব ছিল স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে পুরসভাগুলিরও। রাজ্যস্তরে পরিস্থিতির ওপর নজরদারির ঘাটতিও লক্ষ্য করা গেছে।  এছাড়া হটস্পট চিহ্নিত করে মশা দমন অভিযানের ক্ষেত্রে ঢিলেমি রয়েছে পুরসভার। শুধু তাই নয়, ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল সার্ভিস কর্পোরেশনের সরবরাহ করা মশা মারার তেলও নিম্নমানের। 

এবার যাতে আর এই মশাবাহিত রোগ প্রাণঘাতী আকার না নিতে পারে, সেই কথা মাথায় রেখে আগেভাগেই বিপজ্জনক পুরসভাগুলির তালিকা প্রকাশ করল রাজ্য নগরোন্নয়ন সংস্থা।