ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা:  সবে বর্ষাকাল গিয়েছে। এখন শরৎকাল। এই সময়েও বারবার বঙ্গোপাসাগরে মাথাচাড়া দেয় নিম্নচাপ। ফলে দফায় দফায় বৃষ্টিতে ভেজে আমাদের রাজ্য। আর কদিন পরেই পুজো। সেই সময়েই রাজ্যে বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। যখন এমন আবহাওয়া, তখনই রাজ্যে মাথাচাড়া দিয়েছে ডেঙ্গি সংক্রমণ। একাধিক জেলায় প্রায় রোজই নতুন সংক্রমণের কথা শোনা যাচ্ছে। ইতিমধ্য়েই বেশ কিছু জেলা থেকে মিলেছে ডেঙ্গি আক্রান্তদের মারা যাওয়ার খবরও। বৃষ্টির সময় বিভিন্ন জায়গায় জল জমে, সেখানেই মশার জন্ম হয়। ফলে এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গি থেকে বাঁচতে আরও বেশি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।


ডেঙ্গির অনুকূল আবহাওয়া?
ঝিরঝিরে বৃষ্টি, মাঝে মাঝে কয়েক পশলা বৃষ্টি। এমন পরিস্থিতিতে কোথাও টানা বেশ কয়েকদিন জল জমে থাকায় সম্ভাবনা থাকে। সেটাই মশার বংশবিস্তারের জন্য আদর্শ জায়গা। পুজোয় ঠিক এমনই একটি নিম্নচাপের কথা শুনিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। তাহলে কী গোটা পুজোর সময়টা ডেঙ্গি-বিপদ নিয়ে সতর্ক থাকবে হবে? এমন প্রশ্নই উঠছে। 


চিকিৎসকদের পরামর্শ:
মাইক্রোবায়োলজিস্ট সৌগত ঘোষ জানিয়েছেন যে, এখন যা আবহাওয়া তা ডেঙ্গির বিস্তারের জন্য অনুকূল। সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। কীভাবে ডেঙ্গি নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে? কোনও ব্যক্তির জ্বর হলে এবং ২৪ ঘণ্টার বেশি জ্বর থাকলেই চিকিত্‍সকরা ডেঙ্গি, কোভিড টেস্ট করতে বলছেন। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, বহুক্ষেত্রে দেরি করে ডেঙ্গি চিহ্নিত হওয়ার ফলে, চিকিৎসার ক্ষেত্রে দেরি হয়ে যাচ্ছে। ফলে রোগীর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক হয়ে পড়ছে।


ইতিমধ্যেই ডেঙ্গি-থাবা: 
পুজোর বেশ কিছুদিন আগে থেকেই রাজ্য়ে ডেঙ্গির প্রকোপ শুরু হয়েছে। একাধিক জেলায় সংক্রমণের ছবি দেখে চিন্তায় স্বাস্থ্য প্রশাসন। পরিস্থিতি এমনই যে কোনও কোনও হাসপাতালে মিলছে না শয্যাও। যেমন বাগবাজারের সঞ্জীবনী হাসপাতালের বাইরে ঝুলতে দেখা গিয়েছে 'নো বেড, নো অ্যাডমিশন' লেখা বিজ্ঞপ্তি। ওই হাসপাতালেও এখনও পর্যন্ত একাধিক ডেঙ্গি আক্রান্তের চিকিৎসা হয়েছে। বাগবাজার সঞ্জীবনী হাসপাতালের আধিকারিক দিগ্বিজয় নায়েক বলেন, 'গত একমাসে ২ জন মারা গিয়েছেন। ১ জন সন্দেশখালির বাসিন্দা, আরেকজনের বাড়ি মধ্যমগ্রামে। ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গি উল্লেখ রয়েছে।' এখনও পর্যন্ত আমরি হাসপাতালের ৩টি শাখাতে ৪৫ জনের ডেঙ্গির চিকিৎসা হয়েছে। এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৪৫ জন।


হাসপাতালে তোড়জোড়:
ডেঙ্গি আক্রান্তদের চিকিৎসা করতে যাতে সমস্যা না হয় তার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে পরিকাঠামো তৈরি রাখা হচ্ছে। বেলেঘাটা আইডিতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিশেষ ওয়ার্ড। এমআর বাঙুরেও ডেঙ্গি ওয়ার্ড (Dengue Ward) থাকছে। শিশুদের কথা ভেবে বিসি রায় হাসপাতালে ডেঙ্গি আক্রান্ত শিশুদের জন্য ১০টি সিসিইউ (CCU) থাকছে। পুরসভাও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নজর দিচ্ছে। কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, পুজোর সময় সপ্তমীর দিন ছাড়া, অষ্টমী, নবমী, দশমী প্রত্যেকদিনই খোলা থাকবে পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি। 


ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তর কথা স্বীকার করে নিয়ে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন যে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য চেষ্টা চলছে। কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বলেন, 'প্রতি বরোতে পুজোর সময় হেল্থ ক্লিনিক পুরোদমে চালু। মেয়র ও হেল্থ সেক্রেটারির বৈঠকে বলা হয়, বেড বাড়ানোর কথা। শম্ভুনাথ পণ্ডিতকে রেডি রাখা হয়েছে। জেলা থেকে প্রচুর মানুষ আসবে, তাহলে ডেঙ্গি ছড়াবে। পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে কথা হয়েছে।' ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে পুরসভার তরফে ছড়ানো হচ্ছে মশা মারার তেল। পুজো আবহে পুজোর থিমেও এসেছে করোনা ও ডেঙ্গি সচেতনতা। কুড়ির পল্লির গৌর লাহার স্ট্রিটের এবছরের পুজোর থিমে উঠে এসেছে এমনই বিষয়। 


আরও পড়ুন: বাড়ছে ডেঙ্গি উদ্বেগ, বেডের অভাব, বাড়তি উদ্যোগ জেলায় জেলায়