সুনীত হালদার, হাওড়া : ২ সপ্তাহের মধ্যে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে দু-জনের মৃত্যু। তারপরও বদলাল না হাওড়ার ছবিটা। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আবর্জনায় ভরে রয়েছে নর্দমা। এর জন্য পুরসভার দিকেই আঙুল তুলছেন বাসিন্দাদের একাংশ। 


নর্দমা না ভ্যাট ? নিকাশিতে জমে বর্জ্য, যা দিয়ে জল যাওয়া কার্যত অসম্ভব । ডেঙ্গিতে একের পর এক মৃত্যুর পরেও, এই পরিবেশই এখন আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে হাওড়ার বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের। টিকিয়াপাড়া থেকে শিবপুর, বেলগাছিয়া..সর্বত্র এক ছবি। মশার বংশবৃদ্ধির উপযুক্ত পরিবেশ!


২ সপ্তাহে দু’জনের মৃত্যু
২ সপ্তাহের মধ্যে হাওড়ায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৫ অগাস্ট, মৃত্যু হয় ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের শিয়ালডাঙার বাসিন্দা মিলন রীতের। ৩১ অগাস্ট, একই পরিণতি হয় ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ৩৭ বছরের অক্ষয় মজুমদারের।এক বাসিন্দার অকাল মৃত্যুর জন্য এখন, পুরসভার দিকেই আঙুল তুলছেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের একাংশ। এমনকি মৃত্যুর পরেও, পুরসভার কোনও তৎপরতা দেখা যায়নি বলে অভিযোগ।


আতঙ্কে স্থানীয়রা 
স্থানীয় বাসিন্দা সবিতা দাশ জানালেন, 'আমরা বাচ্চাদের নিয়ে থাকি, মশা নিয়ে খুবই আতঙ্কে আছি। আমরা চিনতাম, এইভাবে মৃত্যু ভাবতে পারছি না। পরিষ্কার করে না, মশা মারার ব্যবস্থা করে না।' শুধু ৮ নম্বর ওয়ার্ড নয়, টিকিয়াপাড়ার অন্তর্গত ২১ নম্বর ওয়ার্ডেও এক ছবি। শেষ যে কবে, এই সমস্ত নর্দমায় পুরসভার সাফাইকর্মীদের হাত পড়েছিল, তা মনে করতে পারছেন না ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।  স্থানীয় বাসিন্দা তাপস মুখোপাধ্যায় জানালেন, ' আমরা নিয়মিত পরিষ্কার হয় না, তেল দেয় না। পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরাও একদম আসে না, পুরসভার টিম আসুক চাই। প্রচণ্ড মশার উপদ্রপ।' 


এই পরিস্থিতির মধ্যে আরও উদ্বেগের কথা শোনালেন তৃণমূল পরিচালিত হাওড়া পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী। তিনি জানিয়েছেন,  ' উত্তর হাওড়ার ১৪, ১৫ এবং ১২ নম্বর ওয়ার্ডে গত তিন সপ্তাহে সংক্রমণ বেড়েছে। তবে যে দুটি ওয়ার্ডে রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সেখানে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা কম। এ ব্যাপারে পতঙ্গবিদের সঙ্গে কথা বলা হবে।' 


ভোট না হওয়ায় প্রশাসকমণ্ডলীর দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে হাওড়া পুরসভা। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নেই কাউন্সিলর। আর এই কারণেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ থমকে রয়েছে বলে অভিযোগ বিজেপির। যদিও তা একেবারেই মানতে নারাজ, প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান। ডা. সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ' সব জায়গায় যদি বিজেপি কাউন্সিলর হয় তাহলে কি ডেঙ্গি হবে না ? সবাই শহরের উন্নতি দেখতে পেলেও ওনারা  দেখতে পাচ্ছেন না? পুরসভার পক্ষ থেকে ২০০ জন স্প্রেম্যান নিয়োগ করা হয়েছে।  ' 


হাওড়াবাসীর অবশ্য এই তরজায় কোনও আগ্রহ নেই। তাঁদের দাবি একটাই, ডেঙ্গিতে আরও একটা প্রাণ যাওয়ার আগে, পদক্ষেপ করুক পুরসভা।