প্রকাশ সিনহা, অনির্বাণ বিশ্বাস ও সুমন ঘড়াই, কলকাতা: পাঁচ-দশ জন নন, সারা ক্ষণ ৩০ থেকে ৩৬ জন নিরাপত্তারক্ষী থাকেন। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শতাধিক আধিকারিক মোতায়েন থাকেন নিরাপত্তায়। তার পরও প্রশ্নের মুখে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নিরাপত্তা।  কখনও নিরাপত্তার (Mamata Banerjee Security) বলয় টপকে তাঁর কাছাকাছি পৌঁছে যান কেউ, কখনও মাটির নীচে পুঁতে রাখা বোমার খবর পাওয়া যায় না। আবার কখনও নিরাপত্তায় মোড়া মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনেই ঢুকে পড়েন কেউ। রাতভর সকলের নজর এড়িয়ে বাড়ির মধ্যেই থেকে যান তিনি। তাতেই প্রশ্ন উঠছে, ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে কীভাবে মমতার বাড়িতে ঢুকে পড়লেন অভিযুক্ত? তাহলে কি নিরাপত্তায় বড়সড় কোনও গলদ ছিল?


জেড প্লাস ক্যাটেগরি সত্ত্বেও মমতার নিরাপত্তায় গাফিলতি!


VVIP হিসেবে জেড প্লাস নিরাপত্তা (Z Plus Category Security) পান মমতা। ২৪ ঘণ্টা তাঁর বাড়িতে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা মোতায়েন থাকে। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সব সময় ৩২ থেকে ৩৬ জন নিরাপত্তারক্ষী থাকেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ১০ জন কম্যান্ডো। এ ছাড়াও থাকেন পার্সোনাল সিকিওরিটি অফিসাররা, যাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরে থাকেন।


মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় সব মিলিয়ে, দিনভর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ১৫০ জন আধিকারিক মোতায়েন থাকেন। অথচ এত কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই বাড়ির চত্ত্বরে ঢুকে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা কীভাবে থেকে গেলেন এক সন্দেহভাজন? কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার তুষার তালুকদারের কথায়, "মুখ্যমন্ত্রী তো সাধারণ বাড়িতে থাকেন, কোনও সরকারি ব্যবস্থাপনায় থাকলে, নিরাপত্তা নিশ্চিদ্র করা সুবিধে হত। আমার মনে হয়, যারা দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করেননি।"


প্রাক্তন পুলিশকর্তা বিকাশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "যেভাবে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ঢুকে গেল, মনে হয় আগে থেকে রেকি করেছে।"


আরও পড়ুন: Mamata Banerjee Security: কামদুনি, নন্দীগ্রাম থেকে কালীঘাট, কেন বার বার মমতার নিরাপত্তায় ফাঁক!


সরকারি ভাবে যদিও মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় ভুলচুকের প্রশ্ন থাকে না। মুখ্যমন্ত্রীর জন্য বরাদ্দ জেড প্লাস কনভয়ের আওতায় মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ে মোট ১৮ টি গাড়ি থাকে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে গাড়ির সামনে থাকে চারটি পাইলট কার। পুলিশ সূত্রে খবর, কনভয়ের প্রথমে থাকে ‘অ্যাডভান্স সুপিরিয়র অফিসার্স মোবাইল’। ওই গাড়িতে ন্যূনতম ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসার থাকেন।


এরপর থাকে ‘অ্যাডভান্স পাইলট’ কার। মুখ্যমন্ত্রী যে জেলায় যান, সেই জেলা পুলিশের একজন অফিসার থাকেন। এর পর থাকে পাইলট কার। ওই গাড়িতেও থাকেন জেলা পুলিশের একজন সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার অফিসার। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ডাইরেক্টরেট অফ সিকিওরিটির অফিসারদের ‘অ্যাডভান্স’ পাইলট কার থাকে। 


এর পর যথাক্রমে ভিআইপি কার, এসকর্ট ওয়ান ও এসকর্ট টু কার, জ্যামার, মুখ্যমন্ত্রীর জন্য বিকল্প - স্পেয়ার VIP কার থাকে। ওই গাড়ির পিছনে থাকে, মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান নিরাপত্তা আধিকারিকের গাড়ি। তার পর থাকে এসকর্ট থ্রি গাড়ি। থাকে ইন্টারসেপশন ওয়ান ও ইন্টারসেপশন টু গাড়িও।


এর পর থাকে মহিলা পুলিশের গাড়ি, যার পোশাকি নাম লেডি কন্টিনজেন্ট ভেহিকেল। তার পর থাকে অ্যাম্বুল্যান্স। একে বারে পিছনে থাকে তিনটি গাড়ি থাকে। প্রথমটি টেল কার, তার পর থাকে স্পেয়ার লেডি সিকিওরিটি ভেহিকেল এবং সবার শেষে থাকে স্পেয়ার ইন্টারসেপশন কার।


কী ভাবে মমতার বাড়িতে সন্দেহভাজন!


সোমবার, কলকাতা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার রাজেশ যাদবের নেতৃত্বে কলকাতা পুলিশের একটি উচ্চপদস্থ টিম, নবান্ন ও কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির এলাকা ঘুরে দেখেন। কত গাড়ি আসে, লগবুকে এন্ট্রি হয় কি না, সিসি ক্যামেরা মনিটরিং হয় কি না, খতিয়ে দেখেন তাঁরা।