কলকাতা: মঙ্গলের সন্ধ্যায় সুরের আকাশ থেকে ঝরে গেল সন্ধ্যা-তারা। প্রয়াত গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। কোভিডকে হারালেও, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জীবনযুদ্ধে হেরে গেলেন ৯০ বছরের কিংবদন্তী। যদিও গীতশ্রীর মৃত্যুর পরও অব্যাহত থাকল সেই তরজা। যা নিয়ে তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর বিজেপি সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, "এটা দুর্ভাগ্যের বিষয়, শেষ জীবনে রাজনীতির শিকার হলেন, তাঁকে পদ্মশ্রী নিতে দেওয়া হল না। এটা আমার মনে হয়, তিনি চান কি না, তাঁর অডিও দেখলাম না, ভিডিও দেখলাম না, জোর করে তাঁর নামে চাপিয়ে দিয়ে, তাঁকে বঞ্চিত করা হল। তৃণমূলের লোকেরা এই নোংরা রাজনীতি করেছেন। তৃণমূলের লোকেরা নিজের রাজনীতির কারণে বাংলার যাঁরা গর্ব তাঁদের ব্যবহার করেছেন এবং বিতর্কের মধ্যে এনে ঘৃণ্য রাজনীতির শিকার করেছেন।"
বিজেপি নেতা এও বলেন, "সিপিএমের লোকেরা যেমন বুদ্ধবাবুকে বঞ্চিত করেছেন, জ্যোতিবাবুকে বঞ্চিত করেছেন, তৃণমূলের লোকেরা নিজের রাজনীতির কারণে বাংলার যাঁরা গর্ব তাঁদের ব্যবহার করেছেন এবং বিতর্কের মধ্যে এনে ঘৃণ্য রাজনীতির শিকার করেছেন।"
এদিকে, এই ঘটনা নিয়ে সুর চড়িয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এদিন কোচবিহারের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "পদ্মশ্রী নিশ্চই সম্মানের, কিন্তু তার ওপরও দু-তিনটে পুরস্কার রয়েছে, সেই পুরস্কারগুলো অনেরদিন আগে প্রাপ্য ছিল, জীবনের শেষ বয়সে তিনি একটা ধাক্কা খেয়েছেন, অসম্মানিত বোধ করেছেন, আমরা তার জন্য ব্যথিত, শোকাহত, মর্মাহত।"
প্রসঙ্গত, অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির দিন যে বিতর্কটা শুরু হয়েছিল...গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পরও অব্যাহত থাকল সেই রাজনৈতিক তরজা!! সঙ্গীতের সোনালি আকাশে সন্ধ্যা ঘনিয়েছে!! জীবনের পথচলা থেমে গেছে, ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’-এর গায়িকার!! ২৬ জানুয়ারি, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের পরিবারের তরফে দাবি করা হয়, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ফোনে তাঁকে পদ্ম-সম্মান দেওয়ার কথা জানানো হয়। যদিও, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় এই সম্মান প্রত্যাখ্যান করেন। পরিবার সূত্রের খবর, এর পর থেকে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেন।ভর্তি করা হয় হাসপাতালে!! তখনই, মাথাচাড়া দেয় নতুন বিতর্ক!
বিশিষ্টজনেদের একাংশ দাবি করেন, পদ্মশ্রী দিতে চেয়ে, আদতে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে অপমান করেছে কেন্দ্র। এই প্রেক্ষাপটে, গীতশ্রীর মৃত্যুর পর সেই বিতর্ককে আরও একবার সামনে আনলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "সন্ধ্যাদি আমার খুব পছন্দের মানুষ। খুব প্রিয় মানুষ, ওনাকে ভারতরত্ন বললে ভুল হবে না। হয়তো জীবনে কিছুই পায়নি, মানুষের যে ভালবাসা তা কখনও একটা পদ্মশ্রী বা একটা হতশ্রীতে হয় না, পদ্মশ্রী একটা সম্মানের, হতশ্রী আমরা অপজিট ব্যবহার করি। পদ্মশ্রী নিশ্চই সম্মানের, কিন্তু তার ওপরও দু-তিনটে পুরস্কার রয়েছে, সেই পুরস্কারগুলো অনেকদিন আগে প্রাপ্য ছিল, জীবনের শেষ বয়সে তিনি একটা ধাক্কা খেয়েছেন, অসম্মানিত বোধ করেছেন, আমরা তার জন্য ব্যথিত, শোকাহত, মর্মাহত।"
বুধবার, রবীন্দ্রসদনে গীতশ্রীকে শেষশ্রদ্ধা জানান তাঁর গুণমুগ্ধরা।তার মধ্যেই অব্যাহত রইল, গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের পদ্মশ্রী প্রত্যাখ্যান ঘিরে, চাপানউতোর।