কলকাতা: রাখঢাক করে কথা বলা সয় না তাঁর। বরং যা মুখে আসে, তা বলে দেওয়ারই পক্ষপাতী। সেই নিয়ে বিতর্ক বাঁধলেও, অভ্যাস বদলাননি বিজেপি-র (BJP) সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। নিরপেক্ষতার প্রশ্নে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (CBI) তুলনায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরকে (ED) এগিয়ে রেখে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করেছেন তিনি। তা নিয়ে নিজের দলে অসন্তোষ তৈরি হলেও, অবস্থান পাল্টাচ্ছেন না দিলীপ। বরং ইডি-কে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়ে, সিবিআই-কে কার্যতই তুলোধনা করলেন তিনি। 


দিলীপের মন্তব্যে অস্বস্তি বাড়ল বিজেপি-র অন্দরেও!


দু'দিন আগে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি অনুষ্ঠানেই সিবিআই-এর বিরুদ্ধে মুখ খোলেন দিলীপ। বলেন, "আপনারা জানেন, গত কয়েকমাস ধরে এখানে সিবিআই এনকোয়ারি চলছিল। কিন্তু কোনও এফেক্ট হচ্ছিল না। ডকুমেন্টস আসছিল না। ধরা পড়ছিল না। কারণ কী? তার মধ্যে সর্ষের মধ্যে ভূত ছিল। আমিও শুনেছি, খবর আছে। সবার একটা পেট আছে। সবাই বিক্রি হয়। তার দাম থাকে। কেউ লক্ষে, কেউ কোটিতে, কেউ শ’কোটিতে। সেইভাবে বিক্রি হচ্ছিল। সেটা সরকার বুঝতে পেরেছে। আমি যতদূর শুনেছি। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর বিশেষ প্রয়াসে ইডি এসেছে। তারপর কাজ শুরু হয়েছে।"


কেন্দ্রে নিজের দল বিজেপি যখন সরকারে, সেই সময় কেন্দ্রেরই অধীনে থাকা সিবিআই সম্পর্কে দিলীপের এমন বিরূপ মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিশেষ করে গরুপাচার থেকে স্কুল শিক্ষক দুর্নীতির মতো হাই প্রোফাইল মামলার তদন্তভার যখন এই মুহূর্তে সিবিআই-এরই হাতে। তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে লাগাতার প্রশ্ন তুলবে আসছে তৃণমূল। তাদের যুক্তি, আট বছর পেরিয়ে গেলেও সারদা কাণ্ডের তদন্ত এখনও শেষ করতে পারেনি সিবিআই। তদন্ত শেষ করা তো দূর, রোজভ্যালি কাণ্ডে এখনও চূড়ান্ত চার্জশিটই জমা করতে পারেনি তারা। বিগত পাঁচ বছর ধরে নারদ মামলার তদন্তও চলছে। তাই সিবিআই-এর দক্ষতা-যোগ্যতা নিয়েই কার্যত প্রশ্ন তুলছে তৃণমূল। 


আরও পড়ুন: Santanu Sen: 'শুভেন্দুকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না ?', 'সিবিআই সেটিং' নিয়ে বিস্ফোরক শান্তনু


তবে শুধু তৃণমূলই নয়, কেন্দ্রীয় সংস্থার এ যাবৎকালীন ট্র্য়াকরেকর্ডও তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে।  ভোট পরবর্তী হিংসা মামলা এবং কয়লা পাচারকাণ্ডের তদন্তও সিবিআই করছে। এই সব ঘটনার তদন্ত কবে শেষ হবে, কবে শুনানি শুরু হবে, কবে মামলা শেষ হবে, আদৌ কোনও রাঘববোয়ালরা শাস্তি পাবে কি না, কারও কাছে কোনও উত্তর নেই। সেই প্রেক্ষাপটেই সিবিআই-বিরোধী মন্তব্য করে শোরগোল ফেলে দিয়েছেন দিলীপ। তাঁর বক্তব্য ছিল, "যারা সেটিং করেছে, তারা এখন বলছে ইডি কেন? কারণ এই কুকুরটা পোষ মানবে না, কামড়াবে। তবে অসুখ অনুযায়ী ওষুধ কম হয়ে যাচ্ছে।"


দিলীপের এই মন্তব্যের পিছনে দলের রাজ্য বিজেপি-র অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব জড়িয়ে রয়েছে বলে দাবি তৃণমূলের। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের সাফ বক্তব্য, "কহিঁ পে নিগাহেঁ, কহিঁ পে নিশানা দিলীপের। পুরোটাই কৌশল। আসলে শুভেন্দু অধিকারীকে গ্রেফতারিকে গ্রেফতার করিয়ে সিবিআই-কে নিরপেক্ষতার প্রমাণ দিতে বলছেন তিনি।"


দিলীপকে নিয়ে রিপোর্ট তলব কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের!


দিলীপের মন্তব্যে অসন্তোষ বিজেপি-র অন্দরেও। বিধানসভা নির্বাচনে ব্যর্থতার পরই দিলীপকে রাজ্য সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাঁর জায়গায় আনা হয় সুকান্ত মজুমদারকে। তবে ইদানীং কালে বাকি সকলের চেয়ে শুভেন্দু বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেন, সে কথাও গোপন নেই কারও কাছে। তাই কেন্দ্রীয় সংস্থা সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করে দলে দিলীপ আরও কোণঠাসা হয়ে যাবেন বলে অনুমান করছেন অনেকে, যার ইঙ্গিতও মিলতে শুরু করেছে। বিজেপি-র একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, দিলীপ সম্পর্কে ইতিমধ্যেই রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।