কলকাতা : রাজ্য রাজনীতিতে ঘটনার ঘনঘটা। এবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা শোনা গেল রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষের গলায়। বললেন, "আমি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাহুল গান্ধীর থেকে ভাল নেতা মনে করি। অভিষেকের কথাবার্তা অনেক বুদ্ধিদীপ্ত মনে হয় আমার।" তাঁর এই মন্তব্য রাজ্য রাজনীতিতে নতুন জল্পনা উস্কে দিয়েছে। 


তৃণমূলের অন্দরে এখন কার্যত তুলকালাম পরিস্থিতি ! একাধিক বর্ষীয়ান নেতার মন্তব্য়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে, তাঁরা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করছেন কি না, আবার মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের হয়ে ব্য়াট ধরছেন আরেকটা অংশ। এই পরিস্থিতিতে অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের প্রশংসা শোনা গেল আরও একজনের গলায়। তবে তিনি তৃণমূলের কেউ নন ! বিজেপির দিলীপ ঘোষ ! হ্য়াঁ, ঠিক শুনেছেন। দিলীপ ঘোষের গলায় অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের প্রশংসা ! তা-ও আবার রাহুল গান্ধীর সঙ্গে তুলনা টেনে !


দিলীপ ঘোষ বলেন, "আমি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাহুল গান্ধীর থেকে ভাল নেতা মনে করি। রাহুল গান্ধী ৩০-৪০টা ভোট হেরেছেন। তিনি রিজেক্ট হয়ে গেছেন একপ্রকার। তাঁর কথাবার্তার থেকে অভিষেকের কথাবার্তা অনেক বুদ্ধিদীপ্ত মনে হয় আমার। নেতৃত্বে মানুষ স্বীকার করবে কি না...পার্টি স্বীকার করে নেওয়া এক কথা। সময়ের স্বীকার করা অন্য কথা।" 


দিলীপ ঘোষ যখন রাহুল গান্ধীর বুদ্ধিমত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন, তখন তাঁর বুদ্ধিমত্তা নিয়ে পাল্টা খোঁচা দিয়েছে কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার বলেন, "ঠিকই বলেছেন। দিলীপবাবুর মেধা, তাঁর বুদ্ধিমত্তা। গরুর দুধে যিনি সোনা খুঁজে পান, তিনি কার মাথা থেকে কীরকম ব্রেনের ঘিলু খুঁজে পাবেন, তিনিই বিচার করবেন।"


তবে রাহুল গান্ধীর তুলনায় এগিয়ে রাখলেও, দিলীপ ঘোষ আবার এটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন, যে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এখনও মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের ছায়ায় আছেন। তিনি বলেন, "তিনি কাজ করছেন। এটা ঠিক যে, জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। পারিবারিক পার্টির নেতা। পোলট্রি ফার্মে তৈরি করা নেতা। রাস্তায় লড়াই করে তো নেতা হননি এঁরা। যখন পার্টি দায়িত্ব দেবেন, সামনে আসবেন, পরীক্ষা হবে...নেতৃত্বগুণ পাবলিক মানবেন কি না। তাঁর ইমেজে পার্টি চলবে কি না। তিনি জেতাতে পারবেন কি না। তখন মূল্যায়ন হবে। এখন তো গাছের ছায়ায় আছেন। বোঝা যাচ্ছে না। "


তাঁর বক্তব্যের পাল্টা তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য় সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, "দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে দলেই যে একটা চক্রান্তমূলক...তার থেকে এবার ওঁকে সহ সভাপতি করে পাঠানো হল ন্যাশনালে। সেটা থেকে ওঁকে ছেঁটে দেওয়া হল। ফলে, দিলীপ ঘোষের যদি কোনও হতাশা থাকে বা বিরক্তি থাকে, তার যথেষ্ট কারণ আছে। তবু আমি অনুরোধ করব, আপনি অন্য দল করুন। আপনার সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকবে। কিন্তু, হাল ছেড়ো না বন্ধু, বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে।" 


দিলীপ ঘোষ এবং অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের বাগযুদ্ধ, একটা সময়ে বঙ্গ রাজনীতির অন্য়তম চর্চিত বিষয় ছিল। কিনতু, সেই দিলীপ ঘোষ এবার যেভাবে অভিষেককে সার্টিফিকেট দিলেন, তা উস্কে দিল নতুন জল্পনা।