কলকাতা: একসপ্তাহের ছুটিতে যাচ্ছেন চন্দ্রনাথ অধিকারী (Chandranath Adhikary)। তাঁর মানসিক অবস্থা ভাল নেই। পরিবার নিয়ে চিন্তায় আছেন, জানালেন বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিত্সক। সরকারি চিকিত্সক চন্দ্রনাথ অধিকারীর দাবি করেন, হাসপাতালের সুপারের নির্দেশে তিনি অনুব্রতর বাড়িতে যান। বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতিকে বিশ্রামের পরামর্শ লিখে দিতে বাধ্য করা হয়েছিল বলে বিস্ফোরক দাবি করেন ওই সরকারি চিকিত্সক।


সুপারের মৌখিক নির্দেশেই, অফ ডে থাকা সত্ত্বেও অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে গিয়ে তাঁর চিকিৎসা করেন। এবিপি আনন্দে এমনই বিস্ফোরক দাবি করলেন বোলপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের চিকিৎসক চন্দ্রনাথ অধিকারী। তাঁর দাবি সুপার নাকি তাঁকে বলেছিলেন, যে সাদা কাগজে প্রেসক্রিপশন লিখতে। 


চন্দ্রনাথ অধিকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ: সিবিআই সূত্রে খবর, এর আগে গতকাল বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিত্সক চন্দ্রনাথ অধিকারীর সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। আজ ওই চিকিত্সকের বয়ান রেকর্ড করা হতে পারে। সিবিআই সূত্রে খবর, অনুব্রত প্রভাব খাটিয়ে চিকিত্সককে দিয়ে প্রেসক্রিপশন লেখানোর চেষ্টা করেছিলেন কিনা, তা জানতে চাওয়া হয়। কার নির্দেশে ওই সরকারি চিকিত্সক বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতির বাড়িতে গিয়েছিলেন, তাও জানতে চায় সিবিআই। খবর সূত্রের। 


বিস্ফোরক মন্তব্য: দশবারের মধ্যে মাত্র ১ বার হাজিরা। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ফের CBI’এর হাজিরা এড়িয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল! আর এই প্রেক্ষাপটেই বিস্ফোরক মন্তব্য করেন বোলপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের চিকিৎসক চন্দ্রনাথ অধিকারী। যাঁকে মঙ্গলবার অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে তাঁকে দেখতে পাঠানো হয়েছিল! কিন্তু, সবাই একটাই প্রশ্ন জানতে চাইছেন একজন সরকারি চিকিৎসককে অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে যেতে নির্দেশ দিল কে? চিকিৎসক বলছেন, বোলপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সুপার।


তাও আবার না কি ছুটিতে থাকা অবস্থায়! বোলপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের চিকিত্‍সক চন্দ্রনাথ অধিকারীর কথায়, আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ হলেন সুপার বুদ্ধদেব মুর্মু। তিনি সকালে ফোন করে বলেন, আমার অফ ডে ছিল, যে অনুব্রত মণ্ডলের অবস্থা সিরিয়াস, মেডিক্যাল টিম গঠন করা হবে। ওঁর বাড়িতে আসুন। আমি অনুরোধ করি যে, ওঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসুন। হাসপাতালে আনলে সুবিধা হবে। কারণ, ওঁর অনেকগুলো মেডিক্যাল প্রবলেম রয়েছে। উনি (সুপার) বলেন, এখন সার্জিক্যাল প্রবলেম মেন। আপনি আগে আসুন। মেডিক্যাল টিম যাচ্ছে। আপনি গাড়ি করে চলে আসুন। সেই জন্য আমি ওঁর (সুপার) কথা ফেলতে পারিনি। আমি যেতে বাধ্য হয়েছি।


অনুব্রতর চিকিৎসার জন্য তৈরি ৪ জনের দলে ছিলেন বোলপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের (Bolpur Super Speciality Hospital) জেনারেল সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক চন্দ্রনাথ অধিকারী। বোলপুর স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি না নেওয়ার কথা বলেও অনুব্রত মণ্ডলকে আপাতত বেড রেস্টের পরামর্শ দেওয়া বোলপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের চিকিৎসক চন্দ্রনাথ অধিকারীর বিস্ফোরক অভিযোগ এবিপি আনন্দে। 


কী বলছেন চিকিৎসক চন্দ্রনাথ অধিকারী?  অনুব্রতর চিকিৎসক চন্দ্রনাথ অধিকারী বলছেন, ''অনুব্রত মণ্ডল বলেছিলেন বেড রেস্ট লিখে দিতে। সরকারি হাসপাতালের কোনও প্রেসক্রিপশন পাঠানো হয়নি’ সাদা কাগজে আমি অ্যাডভাইজ লিখে দি। সুপারের নির্দেশে আমি অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে গিয়েছিলাম। আমি চেয়েছিলাম অনুব্রত মণ্ডল হাসপাতালে আসুক চিকিৎসার জন্য।'' তিনি আরও বলেন, ''অনুব্রতর বাড়ি যেতে বাধ্য করেছিলেন হাসপাতালের সুপার। সুপার আমাকে নির্দেশ দেন অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে যেতে’ সাদা কাগজে লিখতে বলেছিলেন হাসপাতাল সুপার। আমার কাছে প্রেসক্রিপশনের কাগজ ছিল না। চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল আমার ওপর। সাধারণ মানুষের কাছে হেয় হয়ে গেলাম।'


চিকিৎসকের বয়ান প্রকাশ্যে আসতেই ফের শোরগোল তৈরি হয়। আজ কার্যত মেডিক্য়াল টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে অনুব্রতর বোলপুরের বাড়ি পৌঁছয় সিবিআই। সেখান থেকেই বোলপুরের নেতাকে গরুপাচারকাণ্ডে গ্রেফতার করা হয়। আর এরপরেই চিন্তার কথা প্রকাশ করে পরিবারের কাছাকাছি থাকতে চেয়েছে চিকিৎসক চন্দ্রনাথ অধিকারী।