মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রকাশ সিনহা ও আবীর ইসলাম, বোলপুর : বোলপুরের নীচুপট্টিতে অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে ঘণ্টা দেড়েকের জিজ্ঞাসাবাদের পর 'তদন্তে অসহযোগিতার' অভিযোগে গরুপাচার মামলায় সিবিআই গ্রেফতার করল অনুব্রত মণ্ডলকে। বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতির বাড়িতে প্রথমে পৌঁছে যায় ১০-১২টি গাড়ির কনভয়। অনুব্রতর বাড়ির চারপাশ ঘিরে ফেলে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বাড়িতে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন সিবিআই আধিকারিকরা। অনুব্রত মণ্ডলের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। তাঁদের বের করে দেওয়া হয় বাড়ির বাইরে। তারপর গ্রেফতার করে অনুব্রত মণ্ডলকে ক্যাম্প অফিসের দিকে রওনা হয় সিবিআই।


চড়াম-চড়াম, গুড়-বাতাসা হোক বা খেলা হবে, রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় ফেলা একাধিক শব্দবন্ধ যার মুখ থেকে বেরিয়েছে, তিনি অবশ্য মুখ খোলেননি। এদিন বৃষ্টির মধ্যে সিবিআই আধিকারিকদের কাঁধে ভর দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা এসে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গাড়িতে বসে যান অনুব্রত মণ্ডল। তাঁর কাছে তিনি গ্রেফতার হয়েছেন কি না, জানতে চাওয়া হয়েছিল, তা নিয়েও কার্যত নির্লিপ্ত থেকেছেন বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি।


সিবিআই (CBI) আধিকারিকদের দাবি, গরু পাচারকারীদের সঙ্গে সরাসরি অনুব্রত মণ্ডলের যোগ মিলেছে। তাঁদের থেকে টাকাও অনুব্রত পেতেন বলেই দাবি করেছেন সিবিআইয়েক তদন্তকারী অফিসাররা। প্রসঙ্গত ইতিমধ্যে অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনকে (Saigal Hossain) গ্রেফতার করেছে সিবিআই। তিনি রয়েছেন হেফাজতে। তার সঙ্গে অনুব্রত-র যোগাযোগ থেকে শুরু করে সম্প্রতি দাখিল করা চার্জশিট, সবেতেই অনুব্রত মণ্ডলের নাম রেখেছেন তদন্তকারী অফিসাররা।


গরুপাচার মামলায় (Cow Smuggling Case) ১০ বার অনুব্রতকে তলব করে সিবিআই। মাত্র একবার হাজিরা দেন তৃণমূল জেলা সভাপতি। অসুস্থতার কথা বলে গতকালও হাজিরা এড়ান অনুব্রত। সিবিআই সূত্রে বলা হয়েছে, গতকাল বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিত্সক চন্দ্রনাথ অধিকারীর সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। আজ ওই চিকিত্সকের বয়ান রেকর্ড করা হতে পারে। সিবিআই সূত্রে খবর, অনুব্রত প্রভাব খাটিয়ে চিকিত্সককে দিয়ে প্রেসক্রিপশন লেখানোর চেষ্টা করেছিলেন কিনা, তা জানতে চাওয়া হয়। কার নির্দেশে ওই সরকারি চিকিত্সক বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতির বাড়িতে গিয়েছিলেন, তাও জানতে চায় সিবিআই। খবর সূত্রের। 


এদিকে এলাকায় এমন কেন্দ্রীয় বাহিনীর আচমকা হানা এবং সিবিআই আধিকারিকদের চলে আসায় রীতিমতো উত্তেজনার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। অনেকেই ভিড় জমিয়েছেন কী হয়েছে তা দেখতে। অনেকে ছবি তুলছেন। এক বাসিন্দা জানান, বাজার করতে বেড়িয়েছিলাম হঠাৎ দেখলাম ভিড়। সংবাদমাধ্যমও এসেছে তাই দাঁড়িয়ে গেলাম। আরেক বাসিন্দা বলেন, "দাদার জন্যই এসেছি এখানে। আমরা অনেক দিনের বাসিন্দা। দাদার জন্য আমাদের দুঃখ, কষ্ট হচ্ছে।" 


আরও পড়ুন- 'গরু পাচারকারীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ, অনুব্রত-র কাছে পৌঁছত টাকা' দাবি সিবিআইয়ের