রাজা চট্টোপাধ্যায়, ডুয়ার্স : ফের গোরুমারা অভয়ারণ্য এলাকায় তিন সন্দেহভাজনের দেখা মিলেছে বলে দাবি বন দফতরের। এই পরিস্থিতিতে হাই অ্যালার্ট জারি হয়েছে সেখানে। এমনিতেই গোরুমারা অভয়ারণ্য সহ ডুয়ার্সের একাধিক বনাঞ্চলে ২৪ ঘণ্টাই নজরদারি চলে। সম্প্রতি সন্দেহভাজনের দেখা মেলায় আরও নজরদারি শুরু হয়েছে গোরুমারা অভয়ারণ্য, চাপরামারি, মূর্তি সহ একাধিক চাবাগান অঞ্চলে। বিগত দিনের মতো গণ্ডার শিকারের মতো ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেই কারণে নিরাপত্তা ঢেলে সাজিয়েছে বন দফতর।


২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে গোরুমারা অভয়ারণ্যে চোরাশিকারিদের হাতে মৃত্যু হয়েছিল দুই গণ্ডারের। তারপর ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে একইভাবে আরও একটি গণ্ডার মেরে তার খর্গ কেটে ভিন রাজ্যে পাচার করেছিল চোরাশিকারিরা। তাই, এবার আর কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না বন দফতর। স্বাভাবিকভাবেই নিরাপত্তা কঠোর করতে বনাঞ্চলে কোথাও হেঁটে, কোথাও আবার কুনকি হাতি নিয়ে চলছে বনকর্মীদের টহল। লাটাগুড়ি ও গোরুমারা অঞ্চলের ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে সন্দেহভাজন গাড়ি চোখে পড়লে সেই গাড়ি দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও নাকা তল্লাশি চালাচ্ছেন বনকর্মীরা।


আরও পড়ুন ; জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে ঢুকল হাতির দল, গজরাজকে দেখতে ভিড় গ্রামবাসীদের


প্রতি বছরই জুলাই মাসের ১৫ তারিখ থেকে সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত তিন মাস সমস্ত বনাঞ্চল বন্ধ থাকে বন্যপ্রাণীদের প্রজননের কারণে। সম্প্রতি জঙ্গল খুলে যাওয়ায় পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। এই সুযোগ যাতে চোরাশিকারিরা কাজে লাগাতে না পারে সেদিকেও নজর রাখছে বন দফতর। ২২ তারিখে গোরুমারা ওয়াইল্ড লাইফ ডিভিশন, এস এসবি ও নাগরাকাটা থানার পুলিশ বন দফতরের প্রশিক্ষিত কুকুর অরল্যান্ডোকে নিয়ে মরাঘাট বনাঞ্চল সংলগ্ন হলদিবাড়ি চাবাগান অঞ্চলে এরিয়া ডমিনেশন চালায়। তল্লাশি চলাকালীন পিকু খরিয়া নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে হরিণের খর্গ সহ চাবাগান অঞ্চলে লুকিয়ে রাখা ছয় সিএফটি শাল কাঠ। অভিযুক্ত পিকু খরিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও তথ্য জানার চেষ্টা করছে বন দফতর। পাশাপাশি, তিন সন্দেহভাজনের সাথে এই পিকু খরিয়ার কোনও যোগসাজশ আছে কি না সেটাও তদন্ত করে দেখছেন বন আধিকারিকরা।


বনকর্মী তথা ফরেস্টের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের জেলা সভাপতি বিজয় ধর বলেন, চাপরামারি, গোরুমারার বনকর্মীরা সতর্ক আছেন। গোরুমারা অভয়ারণ্য এলাকায় ২৪ ঘণ্টাই অ্যালার্ট আছে। 


ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন সীমা চৌধুরি জানান, কিছু অচেনা লোককে গোরুমারার বামনডাঙা এলাকায় দেখা গেছে। তাই বনরক্ষার স্বার্থে কর্মীরা প্রচেষ্টা করে যাবেন। কোথাও হেঁটে, কোথাও হাতির পিঠে চেপে চলছে নজরদারি। বন দফতরের প্রশিক্ষিত কুকুরও ভীষণভাবে কাজে দিচ্ছে। যাকে ধরা হয়েছে তার কাছ থেকে তথ্য যেটা এসেছে সেটা বন আধিকারিকরা গোপন রেখেছেন জঙ্গলের স্বার্থে।