কলকাতা: বাংলার শ্রেষ্ঠ পুজো নিয়ে উন্মাদনা, উত্তেজনা যে কেবল বাংলাতেই সীমিত তা নয়। রাজ্য-দেশের বাইরের গণ্ডি পেরিয়ে তা প্রবাসেও পৌঁছেছে বহু আগেই। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে সেই কাউন্টডাউনও। করোনার জন্য যদিও গত দু-বছর দুর্গাপুজোর সেই আমেজে প্রবাসেও ভাঁটা পড়েছিল। কোভিডের কড়া নিয়মের বেড়াজালে আঁটকে ছিল উন্মাদনার পারদ। তবে এবারে বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস। বাংলার দুর্গাপুজোর আনন্দকে সবভাবে পেতে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে বেঙ্গলি কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন সাউথ অস্ট্রেলিয়ার তরফে প্রতিবছরের মতো এবছর রাখা হচ্ছে বিশেষ আনন্দ উৎসব। সেন্ট পিটার্স ইয়ুথ সেন্টারে আয়োজন করা হচ্ছে এ বছরের উমা আরাধনার।
পুজো উদ্যোক্তাদের তরফে কালচারাল সেক্রেটারি মৌলী দাস চন্দ বলেন, "এই পুজো শুরু হয়েছিল ১৯৯৮-এ। বলা যায়, প্রথম মূর্তি পুজো। ২০১২ সাল পর্যন্ত অ্যাডিলেডে এটাই ছিল একমাত্র পুজো। ব্যক্তিগতভাবে সেই পুজো শুরু হলেও পরবর্তীতে একটি অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করে পুজোর পরিসরকে আরও বৃদ্ধি করা হয়। বিক্রমজিৎ সেন, যিনি বুলবুলদা নামে আমাদের মধ্যে পরিচিত, তাঁর হাত ধরেই এই পুজো শুরু হয়।" সেই থেকেই এই বঙ্গ ট্র্যাডিশন অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের অ্যাডিলেডে ধরে রেখেছেন কর্মকর্তারা। যদিও করোনা কোপ পড়েছিল সেখানেও। দু'বছর পুজো হলেও আয়োজনে প্রাচুর্য ছিল না। অতিমারী সৃষ্টিকারী ভাইরাসের চোখ রাঙানি মেনেই দুর্গাপুজোর 'নমো নমো' করেই সেরেছিলেন তাঁরা। তবে এবারে এই পুজো ফিরছে পুরনো মেজাজে, আগের ছন্দেই।
আরও পড়ুন, মহিষাসুরমর্দিনী থেকে কীভাবে দেবী চণ্ডিকা হয়ে উঠলেন বঙ্গদেশের দুর্গা, পুরাণের এক অজানা কাহিনী
সময়ের ব্যবধানে কলকাতার থেকে ৫ ঘণ্টা এগিয়ে থাকলেও অ্যাডিলেডের এই পুজোর বিশেষত্বই হল, বাংলা পঞ্জিকার দিন মেনেই বোধন থেকে বিসর্জন পুজো হয় দিনের দিনই। অর্থাৎ কলকাতাতে যেদিন আবাহনের মন্ত্রপাঠ শুরু কিংবা অষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলি এবং নবমী নিশিতে প্রহর গোনার পালা, সুদূর অস্ট্রেলিয়াতেও সেই স্বাদ অক্ষুণ্ণ থাকছে এবছর। আর এখানেই এই পুজোর বিশেষত্ব। প্রবাসের পুজো সাধারণত হয় উইকেন্ডে। অনেক সময় তা দু'দিনেও সেরে ফেলা হয়। কিন্তু অ্যাডিলেডের এই পুজো কিন্তু চারদিনের। ২ অক্টোবর মহাসপ্তমীর পুজো থেকে ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমী পালন। এক টুকরো তিলোত্তমাকেই যেন নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নেওয়ার পালা। এ বছর মায়ের বোধন অবশ্য হবে কলকাতা থেকে অ্যাডিলেডে যাওয়া পুরোহিতের হাত ধরেই।
এবার আসা যাক ভোগের কথায়। দুর্গাপুজোয় ভোগ এক ভিন্ন মহিমা। তা সে খিচুরি-লাবড়া হোক, কিংবা লুচি-আলুরদম। যদিও করোনাকালে নিয়মে ভোগ-বিধিতেও কোপ পড়েছিল। বসে খাওয়ার বদলে ভোগের প্যাকেট দেওয়া হয়েছিল। তবে এ বছর কোভিডের চোখরাঙানি নেই বলে ভোগের ক্ষেত্রেও কার্পণ্য নেই। পুজো উদ্যোক্তাদের আশা নতুন সদস্য ও পুরনো সদস্য মিলিয়ে লোকসংখ্যাও হবে অনেক বেশি। মৌলি দাস চন্দ বলেন, "এখানে প্রায় ১০০ এর বেশি সদস্যরা রয়েছেন। সেই সংখ্যা আগামীতে বাড়তে পারে। দু'বছর পর এই পুজো নিয়ে তাই বাড়তি উৎসাহ রয়েছে সকলের মনেই।" হবে নাই বা কেন? হোক না সুদূর প্রবাস। সেখানের মনেও জমেছে আশ্বিনের নীলাকাশের পেঁজা তুলোর মেঘ, চোখে ভাসছে নদীর পাড়ে কাশফুলের মেলা, নৌকো করে সপরিবারে উমা আসছেন বাড়িতে। বরণ করতে তাই প্রস্তুত অ্যাডিলেডও।